ইবি প্রতিনিধি
সিনিয়রকে তুমি বলে সম্বোধন করে ম্যানার শেখানোকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে মারামারীর ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লালন শাহ হলে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সন্ধ্যায় লালন শাহ হলের ২১৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সালাউদ্দিনের খোঁজে তার কক্ষে যায় একই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সুজন নামের এক সিনিয়র। এসময় সালাউদ্দিন কক্ষে না থাকায় তার রুমমেট ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের নাঈমের কাছে সালাউদ্দিন কোথায় তা জানতে চায় সুজন। এসময় নাঈম সুজনকে ‘সালাউদ্দিন কে?’ বলে প্রশ্ন করে। তখন সুজন নাঈমের শিক্ষাবর্ষ জানতে চাইলে নাঈম শিক্ষাবর্ষ না বলে উল্টো সুজনকে তুমি বলে সম্বেধন করে এবং বলে ‘শিক্ষাবর্ষ পরের বিষয়, রুমে ঢুকলে যে সালাম দিতে হয় এসব ম্যানার কি ভূলে গেছ?’
এসময় সালাউদ্দিন কক্ষে আসে এবং সুজনের সাথে নাঈমের পরিচয় করিয়ে দেয়। একই সাথে তার সিনিয়য়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় সালাউদ্দিন জুনিয়র হলেও নাঈমকে শাসায়। এতে নাঈম সালাউদ্দিনের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এসময় উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সুজন বিষয়টি ওই হলের সিনিয়র ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের হাফিজকে জানায়। এতে হাফিজ সুজনকে সাথে নিয়ে নাঈমের কক্ষে গিয়ে বকাঝকা করে। একইসাথে পরে তার কক্ষে দেখা করতে বলে।
এদিকে নাঈমের রাতে দেখা করতে দেরি হওয়ায় তাকে হাফিজ বেশ কয়েকবার ফোন দিলে নাঈম বিষয়টি অন্যান্য হলে থাকা তার বন্ধুদেরকে জানায়। ফলে তার বিভাগের বন্ধু সাকিব শিকদার ও বঙ্গবন্ধু হলের সালমান সাকিবের সাথে জিয়া হলের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের নিশাত সরকার বাঁধন, ওই হলের ইংরেজি বিভাগের নিশাতসহ কয়েকজন লালন শাহ হলে যায়। পরে সেখানে লালন শাহ হলের হাফিজ, সুজন ও ইশতিয়াক আহমেদ শাওনসহ তাদের অনুসারীদের সাথে বাগবিতান্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা মারামারীতে জড়িয়ে পড়ে। তখন হাফিজ, সুজন, শাওনের নেতৃত্বে হল থেকে রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হয় শিক্ষার্থীরা। এসময় সালমান সাকিব সহ কয়েকজন কর্মী আহত হয়। পরে ঘটনাস্থলে সাকিব, বাধনসহ তাদের কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে হল ত্যাগ করেন। পরে উভয় গ্রুপের কর্মীরা লালন শাহ হলের সামনে অবস্থান নেয়। ফলে হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত, শাহজালাল সোহাগ ও ওই হলের আলামিন জোয়ার্দার হলের সামনে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদেরকে ছত্রভঙ্গ করে যার যার হলে পাঠিয়ে দেন।
জানা গেছে, সালমান সাকিব, নিশাত সরকার বাঁধন ও নিশাত শাখা ছাত্রলীগ নেতা ফজলে হাসান রাব্বির অনুসারী এবং হাফিজ ও সুজন ছাত্রলীগ নেতা শাহজালাল সোহাগের অনুসারী।
এ বিষয়ে সালাউদ্দিনের রুমমেট নাঈম বলেন, ‘হলে মাঝেমধ্যেই সালাউদ্দিনের বন্ধুরা আসত। আমি ওই সিনিয়র ভাইকে ওর বন্ধু ভেবে তুমি করে সম্বোধন করি এবং মজা করে ম্যানারের বিষয়টি বলি। তবে ভাইয়ের পরিচয় পাওয়ার পর আমি তাকে সরি বলি। তারপরেও তিনি আমাকে পরবর্তীতে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সেইসাথে হলের সিনিয়রদের মাধ্যমে আমাকে বিভিন্নভাবে শাসায় এবং হাফিজ ভাইয়ের রুমে যেতে তাড়া দেয়। তখন আমি বিষয়টি বন্ধুদেরকে জানাই।’
এ বিষয়ে সুজন জানান, আমি সালাউদ্দিনের রুমে গেলে ওই জুনিয়র আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে আমি হাফিজ ভাইয়ের কাছে বিষয়টি বললে তিনি ওর কক্ষে গিয়ে কিছুটা বকাঝকা করে পরবর্তীতে দেখা করতে বলেন। এরপর হঠাৎ সে অন্য হল থেকে তার বন্ধুদের নিয়ে আসে। তারা মারমুখী হয়ে হলে এলে হলের ছাত্রদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।
ফিন্যান্স বিভাগের সালমান সাকিব বলেন, আমার বন্ধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টি শুনে আমরা সেখানে ঘটনাটি জানতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের উপর চড়াও হয়।