৩০ মে পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সর্বত্মক লকডাউন

0
169
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বেশকিছুদিন থেকেই জেলায় করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি হওয়ায় এবং সীমান্ত বর্তী জেলা হিসেবে সতর্র্কতায় করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে লকডাউনের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হু হু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় চাঁপাই নবাবগঞ্জের নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২জন। রাজশাহীর পিসিআর ল্যাবে পাঠানো ৯৫জনের নমুনা পরীক্ষার রেজাল্টে ৫২জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসন জরুরী বৈঠকে বসে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আগামী ৭দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা করেছে। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে লকডাউনের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ।
জরুরী পরিসেবা ছাড়া সকল যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। বর্তমানে জেলার শিবগঞ্জ উপ জেলার অনেক মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলেও করোনা আতংকে নমুনা পরীক্ষা না করিয়ে অসুস্থ শরীরেই অবাধে চলাচল করায় করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তবে সচেতনতার অভাবে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
লকডাউন ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব বিপিএম-পি পিএম বার, সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাহাঙ্গির আলমসহ গণমাধ্যমকর্মীরা ও বিভিন্ন সরকারী কর্তকর্তারা।
গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার। এমনকি এক সপ্তাহে জেলায় সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে সরকারি সীধান্তে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করছে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের আশঙ্কা ও উর্দ্ধমুখী সংক্রমণের হার কমাতে মঙ্গলবার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
কঠোর লকডাউনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত জরুরি পরিসেবা বাদে পুরো জেলা সাত দিনের কঠোর লকডাউন থাকবে।
কঠোর লকডাউনে রেলযোগাযোগসহ সকল প্রকার যাববহন বন্ধ থাকবে, তবে জরুরি পরি-সেবা-এ্যাম্বুলেন্স ও পন্যবাহী ট্রাক চালু থাকবে। আগামী ৭ দিনে বাইরের জেলা থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে কোন পরিবহন ঢুকতে পারবে না এবং জেলা হতে অন্য কোথাও যেতে পারবে না। অর্থাৎ আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, লকডাউন চলাকালীন সময়ে সকল প্রকার দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ফার্মেসী খোলা থাকবে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে অব্যশই মাস্ক পরিধান করে যেতে হবে।
এমনকি জুম্মাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ২০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আম বাজারজাতকরন ও পরিবহন করতে, আমের আড়তের পরিধি বাড়াতে হবে। তবে সরাসরি বাগান থেকে ট্রাকে আম পরিবহন করা যাবে। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।
এছাড়াও শিল্প কলকারখানার শ্রমিকরা নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত করবে। এছাড়া জরুরি পরি-সেবা-কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য পরিবহন, কোভিড টিকা, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী, ইন্টারনেট লাইন সংযোগ সংশ্লিষ্টরা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবেন। জেলা প্রশাসক সকলকে সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানান।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৯ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে জেলায় করোনা রোগী চিকিৎসাধিন রয়েছে ২৫৯ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১২৭৫ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। আর ১ হাজার ২০ জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং মারা গেছে ২৫ জন।
ভারত থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে মোট ৬৯জন। এর মধ্যে একজনের দেহে করোনা সনাক্ত হয়েছে। ভারত থেকে আসা মানুষদের সকলকে জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে এবং সোনামসজিদ ডাকবাংলোতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here