প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত সফর বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। সম্পর্ক সুসংহত করে এগিয়ে যেতে চাই। সেখান থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসিনি, অনেক কিছু পেয়েছি।
ভারত সফর নিয়ে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা একথা বলেন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো শুরু করেন।
ভারতের কাছ থেকে আমরা কী পেলাম- জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের চারদিকে কিন্তু ভারত। সেই বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে সবদিক দিয়ে যে সহযোগিতা…আমরা পাইপ লাইনের মাধ্যমে কিন্তু তেল নিয়ে আসছি। রিফাইন করা তেল সহজেই পাবে। উত্তরাঞ্চলের তেল সহজেই পাওয়া যাবে। ভারতের কাছ থেকে যাতে এলএনজি আনতে পারি..এরকমভাবে যদি চিন্তা করেন, অনেক কিছু পেয়েছে। শূন্য হাতে ফিরে আসিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ভারতের আন্তরিকতা সবসময়ই ছিল। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দলমত এক থাকে। একাত্তরে যেমন এক হয়ে সমর্থন দিয়েছিল। আবার ছিটমহল যখন বিনিময় করি ভারতের সংসদে যখন এটা পাস হয়, তখন সেখানকার সব দল কিন্তু সমর্থন দিয়েছিল। একটা দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। তবে সেসব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্তত পরিষ্কার- কারও সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব। ’৯৬ সালের পর আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা নিয়ে কেউ কথা-ই বলেনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। তবে এতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও ফাটল ধরেনি।
কুশিয়ারা নদীর পানি পাওয়ার বিষয়ে ও সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কবে নাগাদ পানি পাওয়া যাবে- জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ইন্ধিরা গান্ধীর সময়ে যে চুক্তিগুলো হয়েছিল; সেগুলো বাস্তবায়ন হলে দু’দেশ অনেক এগিয়ে যেতো।
সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েছে, সব জলাভূমির নাব্যতা ফিরিয়ে এনে জলাধার সংরক্ষণ করা। সেচের খালগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যৌথ নদী কমিশনের মিটিং হয়ে গেছে। দ্রুতই এই সমঝোতা বাস্তবায়ন হবে। এখানে যেহেতু পানিটা পাব, আমরা এটা দ্রুত করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে যারা সমালোচনা করেছে, তারা কী করেছে? আমরা তো ঋতু বদলের মতো সব ভুলে যাই। খালেদা জিয়া যখন ভারত সফরে গেল, সেখান থেকে ফিরে এসে বললো; গঙ্গা নদীর পানির কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিল।
অর্থাৎ গঙ্গায় পানির অধিকার নিয়ে কথা বলতে, নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলতে ভুলে যায়। এটা আপনারা একটু জিজ্ঞেস করে দেখেন না। তারা তো ভুলে গিয়েছিল, আমরা কিন্তু ভুলি নাই। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা চুক্তি করে এসেছি। দেশের স্বার্থের কথা তারা (বিএনপি) ভুলে যায়।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ভারতের পণ্য যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে, শুল্ক তুলে দিয়ে ছিল। ভারতের পণ্য বাংলাদেশে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। সাইফুর রহমান সবকিছু ওপেন করে দিল। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কী যাবে, সেটা কিন্তু কিছু করেনি। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো জানানো উচিত।
‘বঙ্গবন্ধুর’ বায়োপিক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মাঝে করোনার কারণে শুটিং বন্ধ ছিল। তারপর বম্বেতে বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে। কিছু অংশ আমাদের এখানে হয়েছে। এর কোয়ালিটি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে।
কিন্তু কান ফেস্টিভালের মতো জায়গায় যেহেতু চলেছে..কানে যাওয়ার আগে আমি দেখেছি। যেখানে যেখানে সংশোধন দরকার, করে দিয়েছি। যদি সেখানে দেখানো উপযোগী না হতো, তাহলে দেখাতে দিতো না। তবে ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর মতো করে কেউ দিলে হয়তো আমাদের ভালো লাগবে না কিন্তু কাউকে না কাউকে তো অভিনয় করতে হবে।
তারপরও যারা অভিনয় করেছে অনেক আন্তরিকতা নিয়ে করেছে। এটা এডিটিং চলছে। একটা ভালো সময় চিন্তা করছি। সেভাবেই আসবে। রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের মনোভাব জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
এরপরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ভারত যাতে এই বিষয়ে সহায়তা করে। ভারত যথেষ্ট সহযোগিতা মনোভাব দেখিয়েছে। এখন যে পর্যায়ে যাচ্ছে, আমাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানবিকতার জন্য তাদের ফেলে দিতেও পারছি না। কথা হলো, মিয়ানমার তো কারও কথাই শোনে না। তারা নিজেরাই যুদ্ধ করছে।
অর্থপাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বনামধন্য অনেকের বিরুদ্ধেই অর্থপাচারের তথ্য আছে। নজরদারি আছে। সুইস ব্যাংকে কিন্তু অনেক আগেই আমরা তালিকা চেয়েছিলাম। মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলার নিয়ে কিছু শ্রেণী খেলতে শুরু করেছিল। সেটা মনিটরিং করে আয়ত্তে আনা হয়েছে।
তবে ডলার সংকট শুধু বাংলাদেশ নয়, এটা বিশ্ব সমস্যা। আমার তো মনে হয় আগামী বছর এই সংকট আরও বাড়বে। চরম দুর্ভিক্ষ হতে পারে। ইউরোপেও খুব খারাপ অবস্থা। তবে আমাদের মাটি আছে। এজন্যই বলছি, যার যার জায়গা থেকে উৎপাদন বাড়াতে।
সরকার কিন্তু সবকিছু করে যাচ্ছে। এতটুকু শিথিলতা দেখাচ্ছি না। সাশ্রয় ও সঞ্চয় রাখতে হবে। যুদ্ধ বন্ধ না হলে, নিষেধাজ্ঞা শেষ না হলে আরও খারাপ সময় আসবে। আবার আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।