চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আম বাজারজাতকরণ নিয়ে উৎকন্ঠায় চাষী ও ব্যবসায়ীরা !

0
204
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ কনোরা সংক্রমন প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের দেয়া ৭দিনের কঠোর লাক-ডাউনে আম বাজারজাতকরণ নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে জেলার হাজার হাজার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। যদিও জেলা প্রশাসনের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে আমসহ অন্যান্য কাঁচামাল পরিবহন বা বাজারজাত করনের বিষয়টি। কিন্তু বাস্তবে চিত্র অনেকটায় ভিন্ন।
আম বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে যেসব কাজ, সেসব করতে চাষী বা ব্যবসায়ীদের অনেক বাধার সম্মু-খিন হতে হচ্ছে। আম পাড়া লেবার বা আম পরিবহনে ছোট ছোট যানবাহন বা মাধ্যমগুলো ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছেনা।
বিভিন্ন ভাবে বাধা দেয়ায় জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ করতে না পারায় চরম দূশ্চিন্তায় মাথায় হাত জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। ভরা মৌসুমে আপনজনের কাছে আম পৌছাতেও অনেক হীমসিম খাচ্ছেন জেলার মানুষ।
অন্যদিকে, জেলার কারেনা সংক্রমণের বিষয়টি জানার পর বাইরের জেলা থেকে আম কিন-তে আসছে-না ব্যাপারী ও আম ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম পরিবহন বা বাজার জাত-করণের ক্ষেত্রে নানা জটিল তার মধ্যে পড়ায় জেলার আম নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে মনে করছেন জেলার বিশিষ্ট জনেরা ও ব্যবসায়ীরা। যদিও মানুষের জীবনের আগে কিছুই নয়।
তারপরও, এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে আমের সঠিক দাম না পাওয়ায় এবং ভালো ফলন না পাও-য়ায় আম চাষীরা ও ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমানে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এবছর ভালো ফলন হলেও করোনা সতর্কতায় আবারও বেকায়দায় জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
তাই আমের ভরা মৌসুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম বাজারজাতকরণে তৃণমূল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। অন্যথায় জেলার প্রধান অর্থকরী আম নিয়ে আবারও চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
জানা গেছে, আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গত ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিশেষ কঠোর লকডাউন দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কঠোর লকডা-উনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জেলার আমচাষীরা।
তবে পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোন প্রভাব পড়বে না আম বাজারে। স্বাভাবিক থাকবে আমবাজার, পরিবহন ও বাজারজাতকরনের সকল কার্যক্রম বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ। এদিকে, গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
শুরু হয়েছে খিরসাপাত, হিমসাগর, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, লক্ষ্মণভোগ, বোম্বাই জাতের আম পাড়া। জেলার আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকরা প্রস্তিুতি নেয়ার মধ্যেই হঠাৎ করেই জেলা ব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণায় কৃষকদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর লকডাউন চলছে, রাস্তায় কোন গাড়ি চলতে দেয় না পুলিশ। এভাবে লকডাউন হলে কিভাবে কোথায় আম বিক্রি করবো? আশেপাশের প্রায় সবার গুটি জাতের আম পাড়া হয়ে গেছে।
ভাবছিলাম, বুধবার থেকে আম পাড়া শুরু করবো। কিন্তু বাজারে আম নিয়ে যাওয়া নিয়ে মনে আতংক কাজ করছে। ভোলাহাট উপজেলার আমচাষী সাদিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতা আসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে।
কঠোর লকডাউনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা আসতে পারছে না। এতে আম বিক্রি করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি নায্যমূল্য পাবে না আমচাষীরা। তাই বিষয়টি নিয়ে ভোলাহাটের আমচাষীরা উদ্বিগ্ন।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, জেলার বেশিরভাগ আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদার
স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। তাই আম বাজারজাত করন ও পরিবহন চলমান কঠোর লকডাউনের আওতায় নেই বিষয়টি সিংহভাগ আমচাষী জানেন না।
তাই তাদের মধ্যে গতবছরের মতো ব্যবসা করতে না পারার একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এনিয়ে আম চাষীদের মাঝে আরো ব্যাপকহারে সচেতন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসন কঠোর লকডাউনের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে আম বাজার করার সীদ্ধান্ত নিয়েছে।
এটি আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকদের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। কারন এভাবে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হবে না এবং আমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা পর্যায়ের আম বাজারগুলোকে আরো বেশি মনিটরিং করা ও বাজারের পরিধি বাড়ানোই হবে যুক্তিযুক্ত। জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
তবে জেলার প্রধান অর্থকরী ফল আমের বাজার চলমান রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমের বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে পরিবহনে দেয়া হয়েছে ছাড়। রাখা হয়েছে লকডাউনের আওতার বাইরে। সরাসরি বাগান থেকে ট্রাকে আম পরিবহন করা যাবে।
এছাড়াও অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে।তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাট বাসানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন যেসব বাজার রয়েছে সেগুলোর আকার বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাব গঞ্জের ৫ উপজেলায় এবছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানের প্রায় ২৭ লক্ষ গাছ থেকে এবছর আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here