শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥ শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ৪ যুগের অধিক সময় ধরে জমির দ্বন্দ্বে প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাথে বিরোধ চলছে লতিফ ফকিরের। বর্তমানে পরিবার দুইটির মধ্যে শত্রুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এক পরিবারের বিপদেও অপর পরিবার আগাইয়া আসে না। এক কথায় কারোর ছায়াও মারায় না কেউ। এই নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে একাধিক মামলা মোকদ্দমাও হয়েছে। এলাকায় শালিশ দরবারও হয়েছে দফায় দফায়।
এখনও একটি মামলা হাই কোর্টের আপীল বিভাগে চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে উভয় পক্ষ। তার পরেও এক পক্ষের বসত ঘরের চাল কেটে ফেলে বিবাদমান জমিতে পাঁকা ভবন নির্মাণ করছে অপর পক্ষ। বিষয়টি এলাকায় সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও উভয় পরিবারের সূত্র জানায়, উপজেলার চর ধানকাঠি গ্রামে লতিফ সরদার (ফকিরি চিকিৎসা করায় লতিফ ফকির নামে পরিচিত) ও ধানকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দীর্ঘ ২৫ বছরের সাবেক সভাপতি, সাবেক স্কুল শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা ইছব আলী মুন্সীর একই জমিতে বসবাস।
এই বাড়ির জমির অংশ নিয়ে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে উভয় পরিবারের সাথে দ্বন্দ্ব। ইছব আলী মাষ্টারের পরিবারের সদস্যদের হাতে একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে লতিফ ফকিরের স্ত্রী-সন্তান। থানা পুলিশ, আদালত ও স্থানীয় উদ্যোগে এই বিরোধ মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি। হাই কোর্টে আপিল মামলা চলমান থাকা অবস্থায় লতিফ ফকিরের বসত ঘরের চাল কেটে বিরোধীয় জমিতে পাঁকা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রভাবশালী ইছব আলী মাষ্টার।
এই নিয়ে পুনরায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। আইন-আদালত কোন কিছুই মানতে নাজার প্রভাবশালী ইছব আলী মাষ্টার ও তার পরিবার। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় এখনও আইন-আদালত ও স্থানীয় শালিশদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছেন নির্যাতিত লতিফের পরিবার।
লতিফ ফকির জানায়, তার মরহুম পিতা লালচান ফকির এই বাড়িতে থাকতেন। ৫০ বছর ধরে এই বাড়িতে লতিফের বসবাস। তার পিতার জীবদ্দশায় এই বাড়িতে ১২৯ বছর বসবাস করেছে। পর্যায়ক্রমে ৪টি পর্চায় ২২ শতাংশ জমি রয়েছে তাদের নামে।
সেই জমি দখলে রেখেছে আওয়ামীলীগ সভাপতি, স্কুল মাষ্টার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাবশালী ইছব আলী মুন্সী। জমিতে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করলেই আদালত থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ আসে। থানা পুলিশ এসে কাজ করতে নিষেধ করে। কিছুই সে মানতে নারাজ। আদালতের নির্দেশে এ্যাডভোকেট কমিশন এসে জমি পরিমাপ করে দিলেও তা মানেনা অপর পক্ষ। এখন উচ্চ আদালতে মামলা চলমান।
সেই মামলার শুনানীও আমার পক্ষে আসছে। এবার উচ্চ আদালত অমান্য করে আমার বসত ঘরের চাল কেটে ফেলে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতেছে। কারণে অকারণে আমার স্ত্রী-সন্তান ও পুত্রবধুকে মারধর করে।
আওয়ামলীলীগ সভাপতি, শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছব আলী মুন্সী বলেন, অভিযোগের বেশীর ভাগের সত্যতা আছে। তবে ঘরের যে চাল কাটা হয়েছে তা আমি জানিনা। আমার অনুমোতি ছাড়াই ঠিকাদার ঘরের চালটি কেটে ফেলে। আমি চাল কাটার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবো।
উচ্চ আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় বিরোধীয় জমি হস্তান্তর করা বা জমিতে পাঁকাস্থাপনা নির্মান করার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চায়নি সে। তবে আদালতের রায় তার বিপক্ষে গেলে স্থাপনা সরিয়ে নিবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ধানকঠি ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার আবু বকর, স্থানীয় সালাম মাদবর, জসিম গাজী জানায়, মুক্তিযোদ্ধা ইছব আলী মাষ্টারের সাথে লতিফ ফকিরের জমির বিরোধ দীর্ঘদিনের। অনেকবার তারা সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ইছব আলী মাষ্টার ও তার পরিবার সমাধান চায় না।
এবার লতিফ ফকিরের বসত ঘরের চাল কেটে ফেলে পাকা ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ইছব আলী মাষ্টার নতুন করে আবার বিরোধ সৃষ্টি করেছে। ইছব আলী মাষ্টার অন্যায়ভাবে লতিফের জমি দখল করতেছে।