হরিণাকু-ুতে দেদারসে বালু উত্তোলন করে ভাটায় বিক্রি !

0
345
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কার্যক্রম। বছরের পর বছর ধরে কৃষিজমি থেকে ৬০-৭০ ফুট গভীর করে উত্তোলন করা হয়েছে বালু।
প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে বারবার অভিযান চালালেও বন্ধ করা যাচ্ছে না বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য। অভিযানের পরই ফের শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি। ঘটছে পরিবেশের বিপর্যয়।
অস্তিত্ব সংকটে পড়ে কৃষিজমি হয়ে পড়েছে অনাবাদি। উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দি গ্রামের মাঠে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে এই অবৈধ বালু উত্তোলন। তবে প্রশাসনের অভিযানের ফলে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও অনুমতি ছাড়াই চলছে প্রশাসনের জব্দ করা বালু বিক্রির কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের বেলে মাঠে বছরের পর বছর ধরে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আক্তার মেম্বার ও পৌরসভার চটকাবাড়িয়া এলাকার লাল্টু ওরফে লাল নামে দুই ব্যক্তি। ফসলি জমির অন্তত ২০টি স্থানে ৬০-৭০ ফুট গভীর করে উত্তোলন করা হয়েছে বালু। ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন করা হয়েছে।
ফলে ভাঙনের মুখে পড়েছে আশপাশের কৃষিজমি ও সেচ ক্যানেলের পাড়। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালুমহাল ঘোষণা বা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই জোর করে চালানো হয়েছে এই বালু উত্তোলন।
স্থানীয়রা বলছেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ওই দুই ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরাও প্রতিবাদ করতে ভয় পান। এ বিষয়ে বারবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অনেকবার অভিযানও চালিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অভিযানের পরই ফের শুরু হয় বালু উত্তোলন।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যান ঝিনাইদহের তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সে সময় ওই এলাকার জাগ্রত সমাজকল্যাণ সংগঠনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়েছিল মানববন্ধনে।
তখনই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় বালু উত্তোলন। ধ্বংস করে দেওয়া হয় ড্রেজার মেশিনসহ বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহূত যন্ত্রাংশ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত আক্তার মেম্বার ও লাল নামে ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়। সেই থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও ফের শুরু হয়েছে বালু বিক্রির কার্যক্রম।
এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাদের প্রশ্ন কার ক্ষমতা বেশি, প্রশাসন না বালুখেকোদের? জাগ্রত সমাজকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি পাপন জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন চলছে।
ইতোমধ্যে মাঠের শত শত একর কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। আশপাশের ফসলি জমি তে ধরেছে ফাটল। পাশের সেচ ক্যানেলের পাড় পড়েছে ভাঙনের কবলে। পাশেই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটি মাদ্রাসার আঙিনায় জড়ো করা হয়েছে বালুর স্তূপ। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বালুখেকো ওই দুই ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা। উপজেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি।
তারা অভিযান পরিচালনা করে কাউকে পায় না। পথে পথে থাকে তাদের পাহারাদার। অভি-যানের আগেই বালুখেকোরা খবর পেয়ে সরিয়ে ফেলেন বালু বিক্রির সরঞ্জাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষক জানান, ওই মাঠে তার তিন বিঘা কৃষিজমি ছিল।
সেখানে তিনি ধান, পান ও বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করতেন। কিন্তু মাঠ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে জমিতে আর ফসল হয় না। তাই কম মূল্যে ওই বালুখেকোদের কাছে জমি বিক্রি করে দিয়েছি। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আক্তার মেম্বার বলেন, নিজেরা জমি কিনে বালু তুলে ব্যবসা করছি।
বালু তুলতে হলে প্রশাসনের মাধ্যমে ওই এলাকা বালুমহাল ঘোষণা করে ব্যবসা করতে হয়, আপনারা সেটা করেছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু অনুমতি পাইনি। বর্তমানে অনেক বালু তোলা রয়েছে সেগুলো বিক্রি করছি।
প্রশাসনের জব্দ করা বালু আপনি অনুমতি ছাড়া বিক্রি করতে পারেন কী প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি এই অবৈধ বালু ব্যবসায়ী। ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, দফায় দফায় বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়েছি। কয়েকবার ধ্বংস করা হয়েছে ড্রেজার মেশিন সহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম। জরিমানা ও মামলাও করা হয়েছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। উত্তোলিত বালু জব্দ করে সেখা-নে রাখা হয়েছিল। তবে ইদানীং ফের ওই বালু বিক্রি করা হচ্ছে বলে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here