ইরাকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোকতাদা আল-সদর তার রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে তার সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোকতাদা আল-সদর টুইটারে অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর তার সমর্থকেরা ইরাকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে পড়ে, এবং সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে আরও বেশ কয়েক জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মোকতাদা আল-সদর ইরাকের রাজনীতিতে খুবই জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিক। দেশটিতে তার লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে, এবং তিনি সরকার গঠন নিয়ে দীর্ঘ সঙ্কটের কেন্দ্রে ছিলেন। গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনে মোকতাদা আল সদরের রাজনৈতিক মিত্ররা বেশিরভাগ আসনে জয়ী হয়।
কিন্তু সরকার গঠন নিয়ে শিয়া মতাবলম্বী অপর একটি গ্রুপের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তার পক্ষের পার্লা-মেন্ট সদস্যরা পদত্যাগ করেন। এর আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রতিবাদে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতর ঢুকে তাণ্ডব চালানোর পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে শত শত লোক বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছে।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর দেশটির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া সকল রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানোর দুই দিন মোকতাদা আল-সদর অবসরের ঘোষণা দিলেন।
এক বিবৃতিতে মোকতাদা আল-সদর বলেন, “আমি রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন আমি আমার অবসর এবং সদরপন্থী সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণা দিচ্ছি।”তবে তার আন্দোলনের সাথে যুক্ত কিছু ধর্মীয় সাইট খোলা থাকবে।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএনএ পরে জানিয়েছে, রাজনীতিতে সহিংসতা ও অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মোকতাদা আল-সদর অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত দুই দশক ধরে ইরাকের জনগণের মধ্যে এবং রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন ৪৮ বছর বয়সী মোকতাদা আল-সদর। তার নেতৃত্বাধীন মেহেদী আর্মি ইরাকের অন্যতম শক্তিশালী মিলিশিয়া বাহিনী, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের পরে মার্কিন বাহিনী এবং তাদের মিত্র ইরাকের সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াই করেছে।
পরবর্তীতে এই বাহিনীকে পিস ব্রিগেড নাম দেয়া হয় এবং এটি এখন ইরাকী সশস্ত্র বাহিনীর অংশ হিসাবে অন্যতম বৃহত্তম মিলিশিয়া বাহিনী। মেহেদী বাহিনীর ইরানের সাথে সম্পর্ক থাকলেও পরবর্তীতে মোকতাদা আল-সদর ইরাকের প্রতিবেশী এই শিয়া রাষ্ট্রটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
এবং নিজেকে তিনি একজন জাতীয়তাবাদী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যিনি ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন ও ইরানের প্রভাব বন্ধ করতে চান। মোকতাদা আল-সদরের প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া রাজনৈতিক দলগুলো প্রধানত ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী।
কালো পাগড়ি, কালো চোখ এবং রাশভারী ব্যক্তিত্বের মোকতাদা আল-সদর ছিলেন উচ্চ বেকারত্ব, বিদ্যুৎ সঙ্কট এবং দুর্নীতির শিকার সাধারণ ইরাকীদের মধ্যে খুবই অনুসরনীয় এবং জনপ্রিয়।
তিনি দেশটির অল্প কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অন্যতম যার ডাকে দ্রুত হাজার হাজার সমর্থক রাস্তায় জড়ো হবেন, আবার তাদের মাঠ থেকে বাড়ি ফেরত পাঠাতে পারবেন। ইরাকে নেতৃত্ব নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রতিবাদে জুলাই ও অগাস্ট মাসে দুইবার পার্লামেন্টে ঢুকে বিক্ষোভ করে সদরপন্থী নেতাকর্মীরা।