‘কারাগার’ নিয়ে তোলপাড় দুই বাংলা। ‘কারাগার’ নামের ওয়েব সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন,এপার-ওপার দুই পারের বাঙালির কাছেই ‘সেনসেশন’ চঞ্চল চৌধুরী। সিরিজটি প্রথম পর্ব শেষ হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে অধীর প্রতীক্ষা। কবে আসবে পরের পর্ব?
আসলে পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শওকি একেবারে শুরু থেকেই দর্শককে ধরে রাখতে সক্ষম। বিশেষ করে প্রথম এপিসোডেই যখন দেখা যায় ৩২৫ জন বন্দির সংখ্যা বেড়ে ৩২৬ হয়ে আচমকাই! আর তারপরই আবিষ্কৃত হয়, রহস্যময় জেলকুঠুরির মধ্যে এক আগন্তুক! সে কথা বলতে পারে না। কানে শোনে না। যেটুকু কথোপকথন, সবই ইশারায়। সাইন ল্যাঙ্গোয়েজে।
আর সেই ভাবেই ওই আগন্তুক জানিয়ে দেয়, ২৫০ বছর ধরেই সে জেলবন্দি! পলাশীর যুদ্ধের সময় থেকেই! স্বাভাবিক ভাবেই এমন আজগুবি কথা কারও বিশ্বাসই হয় না। এদিকে জেলে রটে যেতে থাকে একদা এই জেলে থাকা গাজিবাবা আবার ফিরে এসেছেন! তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে কয়েদিরা নিঃসন্দেহ। কিন্তু সত্য়িই কি ওই মানুষটি অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন?
মাহার চরিত্রে তাসনিয়া ফারিন মুগ্ধ করেন। তাঁর মা হাসপাতালে কোমায় আচ্ছন্ন। এদিকে চঞ্চল চৌধুরীর চরিত্রটি হঠাৎই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের গোপন কথাও ইশারায় বলে ফেলে। জেলার মোস্তাক আহমেদের ছেলে জেলবন্দি। সেই এই সব সাবপ্লট সিরিজটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
তবে এই সিরিজের কথা বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি করে চঞ্চল চৌধুরীর কথাই বলতে ইচ্ছে করে। কোনও সংলাপ ছাড়া দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে কেবলই অভিব্যক্তি।
মূলত চোখের ভাষাকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত করেছেন চঞ্চল। যা দেখে সৃজিত মুখোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, চঞ্চল চৌধুরীর চোখ কোনও অভিনয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত। অভিভূত চঞ্চল পরিচালককে এহেন ‘মূল্যায়নে’র জন্য ধন্যবাদ জানালে সৃজিত জানিয়েছেন, ‘আপনার মতো শিল্পীর মূল্যায়ন করার ধৃষ্টতা আমার নেই।… আপনি আমাদের গোটা উপমহাদেশের গর্ব।
এই উচ্ছ্বাস, এই প্রতিক্রিয়া কেবল যে সৃজিতের নয়, তা নেট ভুবনে উঁকি দিলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। শুরুর দিকে চঞ্চলের চরিত্রটির মধ্যে এক আশ্চর্য উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। এরপর ধীরে ধীরে পরত খুলতে থাকে কাহিনির। পালটে যেতে থাকে চোখের ভাষাও। তারপর একেবারে শেষে এসে যখন দর্শকের জন্য এক বড় চমক অপেক্ষায় থাকে, সেই সময় তাঁর চোখের ভাষাতেও যেন এক অন্য ম্যাজিক।
অভিনয় সম্পর্কে মার্কিন অভিনেতা স্যানফোর্ড মেজনারের একটি স্মরণীয় উক্তি রয়েছে। ‘অভিনয় হল কাল্পনিক পরিস্থিতিতে সত্যপূর্ণ আচরণ করা। চঞ্চলের অভিনয় সেই কথাই নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।
আয়নাবাজি’ থেকে সাম্প্রতিক হাওয়া রুপোলি পর্দায় চঞ্চলের একের পর এক মাস্টারস্ট্রোকের সাক্ষী হয়েছে দর্শক। আবার ওয়েব সিরিজ ‘তকদির-এও তিনি চমকে দিয়েছিলেন। কারাগার সেই তালিকারই সাম্প্রতিক সংযোজন।