কৌশলে ৪ কোটি টাকা প্রতারণা !

0
67

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ কৌশলে হাতিয়ে নেয়া প্রায় ৪ কোটি টাকা উদ্ধার ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উল্টো প্রতারকদের দায়ের করা মামলা থেকে হয়রানীর দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে
সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা।

শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের সহায়তার অর্থ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূক্তভোগীদের পক্ষে স্থানীয় মো. নাইমুল হক।

লিখিত বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের দাতা সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান সরাসরি প্রতারক চক্রের যোগসাজসে প্রতারণা করেছেন। আর সংঘবদ্ধ এ প্রতারক চক্র নেপথ্যে থেকে মদদ দিয়েছেন প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা।

প্রশাসন ক্যাডার, পুলিশ ও ব্যাংক কর্মকর্তা যোগসাজসে প্রতারণা করলেও এবং উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির কথাও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাব চাঁপাই নবাবগঞ্জের পুলিশের উপর খাটিয়ে প্রতারণার শিকার ভূক্তভোগী দেরকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন এবং নানাভাবে হুমকী দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাতা সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয়ে কৌশলে অর্থ সহায়তা দেয়ার নামে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাব গঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে চারটি (সিআর-৬১৫/২১, ১৫/২২, ৬২/২২ ও জিআর ১১৮/২১) মামলা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত প্রতারকরা হলেনÑ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রেজাউল ইসলাম রেজা, একই এলাকার বাসিন্দা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, রেজার বন্ধু কাবির, এ চক্রের নারী সদস্য বিউটি ও জেসি। এছাড়াও বিউটির বাবা আনারুল ও মা সেমালি বেগমও এ মামলার আসামি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করে জানানো হয়, এ চক্রের প্রধান আসামী রেজাউল ইসলাম রেজার আপন ভাই মনিরুল ইসলাম পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। যিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি হিসেবে কর্মরত আছেন। তার প্রভাবের কারণে তারা ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের প্রভাবের কারণে সিআইডির এস.আই একেএম ফজলুর রহমান প্রতারক চক্রের অন্যতম আসামি রেজাউল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মো. কাবির ও জেসিকে বাদ দিয়ে আদালতে মনগড়া মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

জড়িত আসামিদের বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ তদন্ত কর্মকর্তাকে দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বাদ দিয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নারাজি দাখিল করে।

শুনানী শেষে অধিকতর ও উচ্চতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেখানেও আসামি রেজাউল ইসলাম রেজার ভাই আরএমপির কাশিয়াডাঙ্গা জোনের ডিসি মো. মুনিরুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার আশংকাও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এ মামলার আসামি ও প্রতারক চক্রের হোতা ইসলামি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী শরিফুন নেশা কনা প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। আসামি জেসি শরিফুন নেশা কনার বান্ধবি।

প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মামলাও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে প্রতারক সিন্ডিকেট। অর্থ প্রতারণা করে স্বর্বশান্ত করেও ক্ষান্ত হয়নি প্রতারক চক্রটি। মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে এছাড়াও উল্টো ভুক্তভোগিদের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে সাজানো মিথ্যে মামলা করা হয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে দায়ের করা সিআর-৬১৫/২১ নম্বর মামলার বাদী মো. মাসুম, সিআর-১৫/২২ নম্বর মামলার বাদী রুবেল আলী, সিআর- ৬২/২২ নম্বর মামলার বাদী মো. কালাম, জিআর ১১৮/২১ নম্বর মামলার বাদী দুরুল, প্রতারণার দুই মামলার স্বাক্ষী দুখু মিয়া ও তার পিতা ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ শফিকুল ইসলামকে আসামী করা হয়েছে।

প্রতারক চক্র আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদলতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করার চেষ্টা করে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তবে তদন্ত শেষে মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত প্রতারক চক্রের সদস্য মোসা. বিউটি বেগম, প্রতারক চক্রের হোতা মো. রেজাউল এর ভাই পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও মিজানুর রহমান এর স্ত্রী শরিফুন নেসা প্রশাসনের কর্মকর্তার দোহায় দিয়ে সিআইডি কর্মকর্তার জন্য খরচ এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে কৌশলে তাঁর কাছ থেকে ২ দফায় ৩ লক্ষ চাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে একটি এফিডেভিটের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এসব অভিযুক্ত প্রতারকদের কৌশলে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিউটি বেগম এফিডেভিটে। সম্প্রতি কারাগার থেকে এফিডেভিট দিয়েছেন এ অন্যতম আসামি বিউটি।

সেখানে প্রতারণার কৌশল ও জড়িতদের বিষয়ে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা আসছে এমন প্রলোভন দিয়ে মহব্বত আলী, মো. দুরুল, মো. রুবেল, মাসুম, কালামসহ ৫০-৬০ জনের কাছ থেকে আমরা প্রায় ৪ কোটি টাকা গ্রহণ করেছি।

মাঠ পর্যায় থেকে আমি, আমার স্বামী রেজাউল ইসলাম, তার বন্ধু (ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা) মো. মিজানুর রহমান, মো. কাবির ও জেসি এইসব টাকা সংগ্রহ করেছি। সংগৃহীত এসব টাকা আমার স্বামী মো. রেজাউল,  মো. মিজানুর রহমান, মো. কাবির ও জেসির কাছে জমা আছে।

.আমাদের পার্টনার মিজানুর রহমান ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত, আমার স্বামী রেজাউলের ভাই পুলিশ সুপার
পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং জেসি নিজেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। আমার স্বামী রেজাউলের বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ প্রায় সবই প্রতারণার মাধ্যমে নেয়া টাকায়।

ক্ষমতাধরদের সহযোগিতায় করা এসব প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষায় প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগিদের দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মিথ্যা মামলা থেকে হয়রানী বন্ধের জোর দাবি জানানো সংবাদ সম্মেলনে। এসময় মামলার বাদী মো. মাসুম, রুবেল আলী, মো. কালামসহ ভুক্তভোগীদের এলাকার স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কাশিয়াডাঙ্গা জোনের ডিসি মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ উঠা মো. মিজানুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ও আমার স্ত্রী এসব কাজের সাথে কোনভাবেই জড়িত নই। একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে একই পরিবারের সদস্যরা। বাইরের কেই নেই এ এঘটনায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here