মানিকগঞ্জের শতাব্দী প্রাচীন গড়পাড়া ইমামবাড়ি অন্যান্য বারের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যর সঙ্গে পবিত্র আশুরা পালন হয়েছে। এ উপলক্ষে গত ১ মহররম (৩১ জুলাই) থেকে ১০ দিনব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
আশুরা উপলক্ষে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিকেলে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে বিরাট শোকমিছিল বের হয়। হিজরি ৬১ সালের ১০ মহরম মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারবর্গ ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন।
সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মার জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে দিনটি বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকরূপে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এবং সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হয়।
গড়পাড়া ইমামবাড়ি ইমাম হোসেনের শহীদ হওয়ার সেই ঘটনাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আসছে। ১ থেকে ৯ মহরম প্রতিদিন ইমামবাড়িতে ফাতেহা, মিলাদ, নেয়াজ, মার্সিয়া ও মাতম অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বমানবতা ও শান্তির অগ্রদূত হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেনের আত্মত্যাগের কথা প্রচারের জন্য ইমামবাড়ি থেকে ৩০টি কাসেদের দল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বের হয়েছে।
ঢাকা জেলার একাংশ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও নাটোর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে কাসেদের দলগুলো আশুরার দিন দুপুরে ইমামবাড়িতে এসে সমবেত হয়।
এছাড়া ইমামবাড়ি থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ শোকমিছিল বের হয়। প্রায় অর্ধলক্ষ ইমাম ভক্তের ‘হায় হোসেন হায় হোসেন ধ্বনিতে মানিকগঞ্জের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়।
হযরত ইমাম হোসেনের শেষ মঞ্জিলের নকশা ‘তজিয়া’, তার নিজের ব্যবহার করা ঘোড়া ‘দুলদুল’ ও কারবালা যুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী নিশান নিয়ে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ইমামবাড়ি থেকে শুরু হয়ে মানিকগঞ্জ শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর আশুরার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা সম্পর্কে শোকসভাও অনুষ্ঠিত হয়।
গড়পাড়া ইমামবাড়ি দরবার শরীফের খাদেম শাহ আরিফুর রহমান বাবুর সভাপতিত্বে সভায় হযরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং প্রশাসনিক কর্তারা শোকসভায় কারবালার মহান শহীদদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন।
সভা শেষে ইসলাম ও বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে বিশেষ দোয়া করা হয়। গড়পাড়া ইমামবাড়ির অন্যতম খাদেম শাহ্ শাহজাদা রহমান বাধন রহমান দোয়া পরিচালনা করবেন।