স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনৈতিক সম্পর্কের বিষয় প্রকাশের জের ধরে নাচোলে স্বামীর আত্মীয়দের নির্যাতনে গৃহবধু মৃত্যু নিয়ে নানা অভিযোগের পর আদালতে হওয়া হত্যা মামলাটি বর্তমানে (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিজ্ঞ আমলী আদালত নাচোল মামলাটি সিআইডিতে তদন্তের জন্য আদেশ দেন।
আদালত সুত্র ও বাদীর আইনজীবী সুত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের নামোটোলা গ্রামে সরল সহজ স্বামীর আত্মীয়ের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে ফারিজা (২৫) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে। মামি শাশুড়ির অবৈধ সম্পর্কের বিষয় ফাঁস করে দেয়ার কারন হিসেবেই এই নির্যাতন এবং মৃত্যুর ঘটনা বলে দাবী করেন এলাকাবাসী।
আয় রোজগারের কারণে বেশীর ভাগ সময় স্বামী বাইরে থাকার সুযোগে এই গৃহবধুর উপর নির্যাতন চালাতো মৃত্যুবরণকারী মোসা. জাকিরা খাতুন ফারিজার স্বামী মো. ইসমাইল এর মামা মো. ওবাইদুর (৪৫) ও মামি মোসা. ডেইজি (৩২)।
ঘটনার পরই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় ওবাইদুর ও ডেইজি এবং পরকিয়া প্রেমিক সাইফুল। এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থার দাবী জানায় ফারিজার মা, স্বামী ও এলাকাবাসী।
১০ জুন/২০ এই ঘটনা ঘটলেও এ মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখেনি কেউই। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও কোন সুরাহা করতে পারে নি ফারিজার মা মোসা. রুলি বেগম (৪৫)। ফারিজার গর্ভের পুত্র সন্তান রমজান (৩) কে নিয়ে চরম দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন রুলি বেগম। এই মৃত্যুর প্রকৃত কারন উদঘাটন করে দোষীদের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানায় ফারিজার মা, স্বামী ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ এ বিষয়টি তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর মৃত ফারি- জার মা রুলি বেগম বাদী হয়ে গত ১৭ আগষ্ট/২০ তারিখ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজ্ঞ আমলী আদালত নাচোল এ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে নাচোল থানা পুলিশকে মামলাটি এফ.আই.আর হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নাচোল থানা পুলিশ ৪ সেপ্টেম্বর/২০ তারিখে (১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২/৩৪ ধারা মোতাবেক মামলা রেকর্ড করেন। মামলার তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে, না-চোল থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. আব্দুল হান্নান মনগড়া তদন্ত করে এবং মামলার বাদীকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অজ্ঞাত কারণে নিজের মনমত একটি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে। এই রিপোর্টের বিষয়বস্তু আদালতের সঠিক বলে মনে না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত ১৪ ডিসেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্ত ও ন্যায় বিচারের সার্থে সি.আই.ডিতে প্রেরণ করেন।
নাচোল থানায় মামলা রেকর্ড এবং পরবর্তীতে মামলার পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার আচরণ বিষয় তুলে ধরে মামলার বাদী ফারিজার মা মোসা. রুলি বেগম জানান, আদালতের নির্দেশে নাচোল থানায় মামলা রেকর্ড করার পর মামলা তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে, এমন কি মামলা স্বাক্ষীদেরকেও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকী-ধামকী দিতে থাকে।
সরজমিন তদন্ত পর্যন্ত করেনি। মামলার স্বাক্ষীদের থানায় নিয়ে গেলেও তাদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ নাকরে অজ্ঞাত কারনে নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সেলিম রেজাও বিভিন্নভাবে কটুক্তি করে কথা বলেন এবং মামলার আসামীদের পক্ষ নিয়ে নানা কথা শোনান। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরও বলেন, মেয়ের হত্যার বিচারের জন্য বার বার নাচোল থানায় ধর্ণা দিয়েও কোন স্থান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতের আশ্রয় নিই।
কিন্তু নাচোল থানা পুলিশ আদালতের নির্দেশ পেয়ে বিষয়টিকে উল্টোভাবে নেয় এবং নানাভাবে হয়রানী করতে থাকে। “মামলা কেন করলাম, মামলা করে আসামীর কি হবে? অযথায় এসব করে বেড়াচ্ছেন, আপনার স্বাক্ষীর কথা শুনেই পুলিশ কি করবে?” এমন নানা অস্বাভাবিক কথাবার্তাও বলেন তদন্ত কর্মকর্তা ও নাচোল থানার ওসি।
তিনি বলেন, মেয়ের বিচারের জন্য একজন অসহায় মা, আর কতদিন এবং কত জায়গায় ধর্ণা দিবো? আমার মেয়ের হত্যার বিচার কি পাব শেষ পর্যন্ত?। তিনি আরও বলেন, মেয়ের হত্যার সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বরাবরও একটি আবেদন জমা দিই ১৫ অক্টো বর /২০। সেটারও এখন পর্যন্ত কোন ফলাফল পায়নি। উল্টো আদালতের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় আসামীর পক্ষে গত ৩১/১০/২০২০ তারিখে।
বিষয়টি নিয়ে আমার নিযুক্ত আইনজীবী আবারও আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের সু-দৃষ্টি কামনা করলে আদালত সঠিকভাবে বিচার কাজ সম্পন্ন করার জন্যই মামলার তদন্ত সিআইডিতে স্থানান্তর করেছে বলেও জানান ফারিজার মা মোসা. রুলি বেগম।