যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞান ও ধর্মীয় দ্বন্দ মানব সমাজকে একে অপরের প্রতি, প্রতিহিংসা পরায়ণ ও নৃশংস করে তুলেছে। মায়াবী দুনিয়ার সমাজনীতি, রাজনীতি কিম্বা অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মীয় ‘উস্কানী’ বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
মানুষ জন্মগত ভাবেই ‘ভাব-সত্যে বিশ্বাসী’। এই সত্যকে আবিস্কারে মানুষ দিন-কে, দিন নানা অভিমত বাখ্যা করে চলেছে যাকে তারা ‘ধর্মীয় বানী’ বলে প্রচার করছে। ফলে এই অভিমত বা ধর্মীয় বানীর অনুকূলে গড়ে উঠছে ভিন্ন ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠি; যারা এক অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে নানা প্রকার বিভ্রান্তিমূলক আচার-আচরনে প্রবৃত্ত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ধর্মীয় সংজ্ঞা বলা হয়েছে- ‘আত্মায় সত্যের আসন প্রতিষ্ঠা করাই ধর্ম। মহাকবি মাওলানা রুমী তার কবিতায় ধর্মের বাখ্যা করেছেন এই ভাবে ‘মানুষের মধ্যে দেবত্ব-পশুত্ব দু‘টুই রয়েছে, যদি পশুত্বকে দূর করতে পার, তবে দেবত্বকেও অতিক্রম করতে পারবে। আবার অনেকে বলেছেন ‘শয়তানের উপর জয়যুক্ত হওয়া-ই মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। অথবা ‘সত্যের উপর যে প্রাণবন্ত ঝংকার, মানুষের আপন আত্মায় অনুভূত হয় তাই -ধর্ম। ‘বিশ্ব-মানব’ ধর্মেরই মূলমন্ত্র।
প্রশ্ন আসতে পারে সত্য কি? আদি-অনন্তে শ্রষ্টা নিজেই গুপ্ত বলে পবিত্র কুর-আনে তাকে ‘আলিমুল গায়েব’ বলা হয়েছে। মানুষ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রষ্টার আত্ম -প্রকাশ ঘটেছে। মানুষই মহান প্রভুর শ্রেষ্ঠর সৃষ্টি। এই বিশ্ব-মন্ডলে একমাত্র মানুষ-ই সত্য। তাই কবি বলেছেন ‘সবার উপরে মানূষ সত্য তাহার উপরে নাই’।
যদি মানুষকে সত্য জ্ঞান করা হয় তবে মানব জীবনের মূলমন্ত্র `ভালবাসা, প্রেম-ভক্তি। বুদ্ধদের মতে ‘জীবে দয়া করে যে জন, সে‘জন সেবিছে ঈশ্বর’। কাজেই বলা যায় বৃহত্তর ধারনাকে মনের ভিতর পুঞ্জিভূত করে একাগ্র চিত্তে পরমকে পাবার বাসনাই ‘প্রাথর্না। এই প্রার্থনার মূলমন্ত্র হল-ভালবাসা বা প্রেম-ভক্তি।
সৃষ্টির সার তত্ত্ব প্রেম বা ভালবাসায় আড়ষ্ট। সৃষ্টির গুণেই জীবে-ভালবাসা ‘শ্রষ্টার আরাধ্য’। জীবন ‘ল’য়ের ধারায় বয়োঃ সন্ধিক্ষনে জীবের ভালবাসার প্রেম-ভক্তির রুপ পরিবর্তিত হয়। শ্রষ্টার প্রতি জীবের আদি- ভালবাসা, জন্মের পর চলন্ত ভালবাসা, যৌবনে আসক্তির ভালবাসা, মৃত্যুতে অনন্ত ভালবাসা মানুষকে আজীবন কাদাঁয়।
শ্রষ্টা আর সৃষ্টির দূরত্ব সৃষ্টিকারী ‘আসক্তি নামক ভালবাসা মানুষকে পরমার্থিক মুক্তিতে বাধাঁর সৃষ্টি করে। এই বাধাঁ অতিক্রম করাই প্রতিটি মানুষের কতর্ব্য। আবার এ কথা সত্য যে, আসক্তিমূলক ভালবাসা না থাকলে দুনিয়ায় ‘মানব বাগান’ সৃষ্টি হতো না। তাই বলা হয় প্রত্যেকটি ভালবাসার ধাপ পরিক্রমায় আল্লাহর অস্তিত্ব নিহিত।
কাজেই বলা যায়, বিশুদ্ধ চিত্তে ভালবাসা বা প্রেম-ভক্তিতেই মানুষের মুক্তি। যেহেতু প্রত্যেকটি জীবনে-ই শ্রস্টার অস্তিত্ব। তাই জীব শ্রষ্ঠারই অংশ বিশেষ। তাই বলা হয় ‘নৈঃবস্ব্য লীলা চারণ। এই ধরা জীব আত্মা আর পরম আত্মার লীলাভূমি। নিদিষ্ট সময় শেষে জীব আত্মা পরমে বিলিন হয়ে চরম সত্যে পৌঁছিয়ে যাবে। ফলে একা নিরঞ্জন শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে। জীবন-মৃত্যু-প্রেম-ভালবাসা এই ধরা পরিচালনার তন্ত্রখেলা।
তাই বিদ্রোহী কবি বলেছেন ‘যে দিন শ্রষ্টার বুকে জেগে ছিল আদি সৃষ্টি কাম সে দিন তুমি আসিলে আমি আসিলাম। কাজেই নারী শ্রষ্টারই অংশ আর পুরুষ শ্রষ্টার রুপ। দুনিয়া সৃষ্টির অযুহাতেই শ্রষ্টা নিজেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পৃথিবী নামে এই লীলাভূমি সৃষ্টি করেছেন প্রেম/ভক্তি ভালবাসার আশায়।
কাজেই সৃষ্টি, সত্য, ধর্ম ভাব-ভালবাসা, প্রেম-ভক্তি সকলই দৈব অস্তিত্ব পরম সত্ত্বার সার সংকলন। ভক্তের ভক্তিতেই শ্রষ্টার অস্তিত্ব। তাই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব পবিত্র কুর-আনে আল্লাহ নিজেই ঘোষনা করেছেন ‘সিরাতুয়াল-লা-জিনা আন্ আমতা আলইহীম, গায়রুল মাহ্গদু‘বে আলাহীম ওয়া-লা- দুয়াল্লিন।
-মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি