নবজাতক ফেরতসহ ঘর ও ভাতা পাচ্ছেন সেই হাসিনা !

0
246
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: টাকার অভাবে নবজাতক বিক্রি করা খবর প্রকাশের পর লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম (৩৫) নবজাতক ফেরতসহ সরকারী ভাবে পাচ্ছেন ঘর ও ভাতা।
শুক্রবার(৯ অক্টোবর) রাতে নবজাতককে ফেরত এনে প্রতিবন্ধী হাসিনার হাতে তুলে দেন আদিত মারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। হাসিনা বেগম আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী। তিনি একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের মেয়ে।
জানা গেছে, ১৮/২০ বছর আগে একই গ্রামের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর সাথে বিয়ে হয় হাসিনার। কিন্তু হাসিনা ছিলেন জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন স্বামীর বাড়িতে থাকলেও পরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হাসিনার ঠাঁই হয় তালুক হরিদাস নয়াটারী বাবার বাড়িতে।
সংসারের খরচ বহন না করলেও স্বামী জোকতার সম্পর্ক রেখেছিল হাসিনার সাথে। এরই মাঝে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়।বড় মেয়ে রোসনার বিয়ে দেন।
ফুটো টিনের ওপর পলিথিন সাঁটানো একমাত্র ঝুপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম। করোনাকালে এবং মাঠে কাজ না থাকায় বেকার কৃষি শ্রমিক হাসিনা বেগম স্থানীয়ভাবে ঋন করে অনাহারে সংসার চালান।
দেনা হয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরই মাঝে গত মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে হাসিনা বেগম একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। অভাবের মাঝে সন্তানকে প্রতিপালনের চিন্তায় পড়েন হাসিনা।
তবে তার ভাই নিঃসন্তান কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাধা দেন হাসিনা বেগম ও তার বড় ছেলে হাসান।
অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পত্তির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করেন। এতে হাসিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোরপুর্বক সন্তানকে তুলে দেন রাজাহাটের দম্পত্তির হাতে।
নবজাতক ভাইকে আটকানোর চেষ্টা করে বাবার গালমন্দের শিকার হন হাসান। নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋণের ১০ হাজার পরিশোধ করেন হাসিনা বেগম। কিন্তু নাড়ি ছেড়া ধন হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছোট ভাইকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বড় ভাই হাসান বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে ঘর ছেড়ে চলে যায়।
এ নিয়ে শুক্রবার বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নির্দেশে শুক্রবার(৯ অক্টোবর) দুপুরে ওই বাড়িতে যান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাইফুল ইসলাম। এসময় বিক্রিত নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসতে দাতাকে ফোনে জানানো হলে রাতে নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসেন গ্রহণকারীরা। এরপর রাতে পুনরায় হাসিনার বাড়িতে যান ইউএনও এবং ওসি। তারা সেই নবজাতককে গ্রহণ করে হাসিনার বেগমের হাতে তুলেন দেন।
এ সময় নবজাতকের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা হাসিনাকে প্রদান করা হয়। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় হাসিনাকে প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকাভুক্তসহ জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধী হাসিনা ও তার ভাই কেরামত আলীকে পৃথক দুইটি ঘর দেয়ার ঘোষণা দেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম বলেন, ছাওয়া(নবজাতক) ফেরতসহ নগদ টাকা পাইলাম এবং ভাতা ও ঘর দিবার চাইছে। যারা এসব দিলো আল্লায় তাদের ভালো করবে।মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রশাসনকে সহায়তা করায় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আদিতমারী উপ জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, প্রতিবেদন দেখে নবজাতককে ফেরত নিয়ে এসে হাসিনা বেগমের কোলে তুলে দিয়েছি।
একই সাথে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে নবজাতকের জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। একই সাথে হাসিনাকে প্রতিবন্ধী ভাতাভুক্তসহ তাকে এবং তার ভাই কেরামতকে ঘর করে দেয়া হবে। নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরো কোন প্রয়োজন হলে সরকারী ভাবে সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here