অনলাইন ভিত্তিক ফ্রি ফায়ার গেমে মত্ত ছাত্র ও যুবকরা, মেধাশুন্য হওয়ার আশঙ্খা বিশেষজ্ঞদের!

0
304
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে ইন্টারনেটে ফ্রি ফায়ার গেম খেলে জীবন কাটছে কিশোর, ছাত্র ও যুবকদের। রাত দিন ফ্রি ফায়ার গেম খেলার কারণে কিশোর, ছাত্র ও যুবকদের মেধাশুন্য হওয়ার আশঙ্খা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু কথা বলার জন্য ছোট মোবাইল ফোন যেন ব্যবহার হচ্ছে না। শিশু, কিশোর, কিশোরীদের হাতেও এখন স্মার্টফোন।
পিতা মাতার আদরের সন্তানদের আবদার মিটাতে ফোন, ইন্টারনেটের ডাটা ও গেম কিনতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। জেলাজুড়ে ফ্রি ফায়ার গেম ছাত্র ও যুবকদের জন্য মরন ফাদে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে শিশু- কিশোরদের প্রিয় গেম খেলতে যে কোনভাবে অভিভাবকদের নিকট থেকে নিচ্ছে অর্থ।
শিশু কিশোরদের দেখা যায় খেলার মাঠে, স্কুলের মাঠে, গাছের নিচে, রাস্তার পাশে বসে ফ্রি ফায়ার গেম খেলছে। স্মার্টফোন হাতে পেয়ে শিশু, কিশোর, কিশোরীদের চোখ এখন মোবা ইলের পর্দার মধ্যে সর্ব সময়। শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ছে ভিডিও গেম, ফেসবুকে। হয়তোবা অভিভাবকদের চোখ এড়িয়ে পর্নোগ্রাফি ও দেখছে কেউ কেউ।
এগুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি মন স্থির করতে পারছে না। করোনা ভাইরাসের কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এই সময়ে শিক্ষার্থীরা মোবাইলে গেমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রাম ও শহরের প্রতিটি অঞ্চলে ইন্টারনেট লাইন চালু রয়েছে। যে কারণে স্থানীয় কিশোর, তরুণ ও যুবকরা ফ্রি-ফায়ার গেম খেলতে ঝুঁকে পড়ছে।
জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা ও পুরো যুব সমাজ দিন দিন ফ্রি-ফায়ার নামক গেম খেলছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা শিক্ষা, বই পড়া, খেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে। সে সময়ে তারা ব্যাস্ত থাকছে মোবাইল ফোনে গেম খেলতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জানান, প্রথম দিকে তার কাছে ফ্রী ফায়ার গেম ভালো লাগত না। কিছু দিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন সে আসক্ত হয়ে গেছে। এখন গেমস না খেললে তার ভাল লাগে না।
করোনায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আসক্ত হচ্ছে এ খেলায়। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দিয়ে তারা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্রি ফায়ার নামক গেম নিয়ে ব্যস্ত যা শিক্ষার্থী কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সময় আমরা অবসর সময়টা বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পার করতাম, কিন্তু এখনকার যুগে এ প্রজন্মের সন্তানদের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীরা অনেকে পড়ার টেবিল ছেড়ে খেলছে এসব গেম, কখনো ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে পর্নছবি দেখছে।
এতে একদিকে তাদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। খেলার সময় এদের কোন দিকে কিছুই খেয়াল থাকে না, নজর থাকে মোবা ইলের দিকে।
সময় মত খাবার ও খায় না। অনেক মায়েরা শিশুকে খাবার খাওয়াতে, কান্না থামাতে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস দেখার অভ্যাস করাচ্ছেন। এতে করেও শিশুরা ক্রমান্বয়ে ঝুঁকে পড়ছে ভিডিও গেমের প্রতি।
এক সময়ে যেখানে শিশুরা অন্য শিশুদের সাথে খেলাধুলা, ধুলোবালি আর কাদায় মাখামাখি করতো, বর্তমান মায়েরা সেখানে অন্য শিশুদের সাথে মিশলে খারাপ হবে, ধুলোবালি ও কাদায় মাখামাখি করলে শরীর, জামা নষ্ট হচ্ছে বলে ধমকও দেন।
মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে শিশুরা মাউসের বাটন, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনেই গেম খেলে খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে ফিরছে এবং ধীরে ধীরে তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে ভিডিও গেমসের উপর।
বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা তাদের শৈশব-কৈশোরের আনন্দ থেকে। বিশেষ করে বাসার সামনের রাস্তা ও বাগানে উঠতি বয়সের তরুন-যুবকরা সারিবদ্ধ ভাবে বসে অনলাইন ভিত্তিক গেমে মত্ত থাকছে।
পড়াশুনাতো দুরের কথা, বাসার টুকিটাকি কাজেও তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কেউ কেউ এতোটাই আসক্ত যে অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচারনও করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ব্যাপক জনপ্রিয় ফ্রী ফেয়ার গেম অ্যাপ।
এইসব অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে এক দিকে যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে। অনেকক্ষণ মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে থাকিয়ে থাকার কারণে ভার্চুয়াল-সম্পর্ক বা বন্ধু তৈরিতে তাদের যতটা মনো যোগ দিচ্ছে শিশুরা, তার সিকিভাগও নেই বাস্তব বন্ধুত্বে।
গেমিংয়ে ভয়ানক আসক্ত হয়ে পড়ায় পড়াশোনার সময় চলে যাচ্ছে স্ক্রিনে। বাচ্চাদের সামাজিকী করণে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তারা বেড়ে উঠছে অসহিষ্ণু হয়ে। না আছে বন্ধু, না হচ্ছে পরিবারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। একঘরে হয়ে পড়ছে তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here