রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কেন পড়বেন?

0
145

সিফাত রাব্বানী: চলমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম৷ অসংখ্য বিষয়ের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে খুব সূচালো সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনার্সে কোন বিষয়ে পড়বে। এত বিষয়ের মধ্যে যারা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবেন, তাদের সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার আগ্রহ অনেকাংশে বেশি । দেশের সরকারি ,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স করা যায় এই বিষয়ে।

ঢাবি,জবি,জাবি ও চবিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পছন্দের তালিকায় রাখছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বরাবরই শিক্ষার্থীদের চাহিদার শীর্ষে এবং যুগোপযোগী একটি বিষয় হওয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেকটাপ্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে এই বিষয়কে পেতে হয় বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে।

বিষয়টি বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও শিক্ষার্থীদের চাহিদার সুবাদে অনেক বিস্তার লাভ করেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সর্বোচ্চ বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। লর্ড ব্রাইস, তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি প্রগতিশীল বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন।

তাঁর চিন্তাধারায় রাজনীতি একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে পরিগণিত। প্লেটো, ম্যাকিয়াভেলি, স্যামুয়েল পি হ্যান্টিংসন, বাংলাদেশের এমাজউদ্দিন স্যারের মত বিখ্যাত ত্বাত্তিকেরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে জড়িত। প্রশ্ন জাগতে পারে কেনো এই সদা পরিবর্তনশীল ও ডায়নামিক বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের তুমুল আগ্রহ?

এটা বুঝতে হলে প্রথমেই খুজতে হবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান কোন কোন বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে? এর ভিত্তি কি? এই বিষয়ের ভবিষ্যৎ কি? রাষ্ট্রবিজ্ঞান বর্তমান বিশ্বের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে এর অবস্থান নিশ্চিত করেনি। মূলত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল উপজীব্য। আদর্শ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি রাষ্ট্রের ও বিশ্বরাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।

পরিবার,সমাজ, সংসদ,নির্বাচন , সরকার প্রক্রিয়া, সংবিধান, মতাদর্শ, পরিসংখ্যানের উপাত্ত বিশ্লেষণ, অর্থ নীতি, পররাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রশাসন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, পরিবর্তনশীল সমাজ, নীতি ও নৈতিকতা সহ নানা গবেষণার বিষয় নিয়ে কাজ করে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এখানে রাজনীতির পাশাপাশি দেশে কিভাবে সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় তাও নির্ণয় করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করে একজন শিক্ষার্থী নিজের জ্ঞানের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারে।

সরকারি চাকরি প্রত্যাশী ও বিদেশে বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের এই বিশেষ শাখা , রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক এগিয়ে। বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় অধিকাংশ বিষয়াদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত।

যেই বিষয়গুলো অনার্স, মাস্টার্স চলাকালীন কোন শিক্ষার্থীর এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়না। যার কারণে চাকরির পরীক্ষায় এই বিষয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক সাফল্য লাভ করে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও সাধারণ ক্যাডারে সহজেই ভালো করার সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

তাছাড়া উন্নত বিশ্বের প্রথম কাতারের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর মেধাবী শিক্ষার্থী, শিক্ষকগণ বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভে বিদেশে পারি জমাচ্ছেন।

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব যেই প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে তার পুরোটাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির। যারা রাষ্ট্র বিজ্ঞান কে স্বপ্নের বিষয় হিসেবে দেখছেন, তারা নিজেকে সুগঠিত করারই প্রয়াস নিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানের তৃষ্ণা, জানার আগ্রহ মিটাতে সক্ষম রাষ্ট্রবিজ্ঞান নামক সামাজিক বিজ্ঞানের বিশেষ শাখাটি।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here