সাটুরিয়ায়, দরগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের যত ঘটনা !

0
166

সোমবার ২রা সেপ্টেম্বর, ঐচ্ছুকতা বসতঃ দরগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ছিলাম ছাত্র আন্দোলনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। বেশ কিছু দিন ধরেই এই বিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন প্রকার দুনীর্তির অভিযোগে হেড-মাস্টারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র/ছাত্রীরা আন্দোলন করছিল। আমি এবং বৈষম্যবিরুধী ছাত্র আন্দোলনের এক প্রতিনিধি আনুমানিক বেলা ১১টায় অনেকটা ভির ঢেলে হেডমাষ্টারের রুমে প্রবেশ করলাম।

রুমটি, তদন্ত কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-জনতা ও স্থানীয় নেতাবর্গে আগমনে কানায় কানায় পরিপুর্ণ ছিল। সৌভাগ্যক্রমে হেডমাষ্টার ও তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছাকাছি একটি বেঞ্চে আমরা বসার জায়গা পেলাম।

দেখলাম, তদন্তের শুরুতেই ছাত্র/ছাত্রীদের শান্ত করার নিত্তিমে জনৈক শিক্ষক অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাকে সাহায্য করছিলেন। আর তদন্ত কর্মকর্তা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নানান অভিযোগের নোট নিচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে ছাত্র/ছাত্রীরা অনাকাংঙ্খিত ভাবে উচ্চসুরে অভিযোগগুলো উত্থাপন করছিল।

পরিস্থিতি অনেকটা উত্তেজনাপুর্ন ছিল বিধায় স্থানীয় মুরব্বী (জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর) জনাব দেলোয়ার হোসেন একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে শান্ত হয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য অনুরোধ করলেন।

ছাত্র/ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১১টি পয়েন্টে তদন্ত কর্মকতা (উপ-জেলা শিক্ষা অফিসার) হেডমাস্টারের প্রতি অভিযোগ দায়ের করলেন এবং তিনি উপস্থিত সকলকে আশ্বস্ত করলেন যে, আগামী তিন দিনের মধ্যে অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কিন্তু পুর্ব থেকেই হেডমাষ্টারের রুমে উপস্থিত কিছু ছাত্র/ছাত্রী চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করছিল এবং তারা চাচ্ছিল হেডমাষ্টার এখন থেকেই পদ-ত্যাগ করুক।

শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সভায় উপস্থিতিরা তাদের বুঝাতে ব্যর্থ হলেন যে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, তদন্ত ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নেয়া আইন সঙ্গত হবে না।

এরকম অবস্থায় উপস্থিত সভাসদগণ একে একে রুম থেকে বাহিরেআসতে থাকলে এক পযার্য়ে ছাত্র/ছাত্রীরা হেডমাষ্টারের পিছু নেয় এবং দরগ্রাম সিএনজি ষ্টেশনে তারা হেডমাষ্টারকে অবরুদ্ধ করে।

স্থানীয় মুরব্বী (জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর) জনাব দেলোয়ার হোসেন সাহেব আবারও তাদেরকে নানান ভাবে বুঝনোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারা দরগ্রাম-সাটুরিয়া রাস্তা অবরোধ করে হেডমাষ্টারের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকে। উপস্থিত সেনাবাহিনীর সদস্যরা তদন্ত রিপোর্টের জন্য দুই দিনের সময় চেয়েও ব্যর্থ হন।

এমনই এক পর্যায়  ছাত্র/ছাত্রীরা জোরপূর্বক হেডমাষ্টারে কাছ হতে পদ-ত্যাগ পত্র আদায় করে তাকে সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করে। নিরা-পত্তার স্বার্থে সেনা সদস্যরা হেডমাষ্টারকে তাদের গাড়ীতে তুলে বালিয়াটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে রওয়ানা হন। এই ঘটনা সারা দর-গ্রামবাসী দারুন ভাবে উপভোগ করলেন।

মন্তব্যঃলক্ষ্যনীয় যে,প্রায় ১১টি অভিযোগে অভিযুক্ত হেডমাষ্টার তাৎক্ষণীক পদত্যাগের করে রক্ষা পান।এই ঘটনায় ১২/১৪ বছরে কিশোর-কিশোরীদের কাছে পরাজিত হয় চিরাচরিত প্রশাসনিক ধারা। দুনীর্তির ধরা-ছোয়ার বাহিরে রয়ে যায়, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা- যাদের হাতে ছিল স্কুল পরিচালনার যাবতীয় দায়ভার এবং অভিযুক্ত প্রত্যেকটি কাজের সংশ্লিষ্ঠতা। হেড-মাস্টারের পদত্যাগের পর পরই মিষ্টি মুখ করার উৎসবে মেতে উঠলেন একদল শিক্ষকমন্ডলী।

নতুন করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ছাত্র/জনতা একটি দুনীর্তিমুক্ত দেশ ও ভেঙ্গে পড়া প্রশাসন সংস্করণে যখন সিদ্ধহস্ত তখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত রয়েছে একটি বিশেষ গোষ্টি। এই গোষ্ঠির প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে লুটতরাজ ও দখলদারীত্ব করা।

আমাদের সকলকেই দুনীর্তিবাজ ও লুটেরাদের থেকে দুরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে- ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আগামীতে  ছাত্র-সমাজকে একটি দুনীর্তিমুক্ত আত্ম-নির্ভশীল সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

 

 

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here