শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥ শরীয়তপুরে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক
সেন্টার, ফিজিওথেরাপী সেন্টার, ডেন্টাল ক্লিনিক ও চক্ষু হাসপাতাল। এসবের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত সিভিল সার্জন অফিসে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদন আসেনি ২৪টির।
ইতোমধ্যে সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে ৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফিজিওথেরাপী সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়। তবুও টনক নড়ছেনা অবৈধ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। নিবন্ধন ছাড়া কোন ক্লিনিক চলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। তবে জনবল সংকটে অনেক অবৈধ ক্লিনিক এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
শরীয়তপুর জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা সদর ঘুরে দেখা যায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিস ঘেষে গড়ে উঠেছে বে-সরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগন স্টিক সেন্টার সহ বিভিন্ন নামের প্রতিষ্ঠান। বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চাহিদার নূন্যতম চিকিৎসাসামগ্রী, চিকিৎ-সক, নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মী বিদ্যমান নেই এসব প্রতিষ্ঠানে।
সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের নির্দিষ্ট দূরত্বও মানা হয়নি এই ক্ষেত্রে। জেলা সদর হাসপাতালের দেয়াল ঘেষে ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ৫০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে বে-সরকারি প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান। সদর হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসকের সাথে থাকেন তিন থেকে ৬ পর্যন্ত ব্যক্তিগত সহকারি। তারা এক কথায় দালালও বটে।
চিকিৎসক দালালদের চাহিদা অনুযায়ী রোগীদের পরীক্ষা লিখে দেন। চুক্তিবদ্ধ ক্লিনিকে নিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করানো হয়। এতে চিকিৎসক ও দালাল দুজনেই কমিশন পায়। আর এই সকল ক্লিনিকের মালিক পক্ষে রয়েছেন সিভিল সার্জন অফিস, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা থেকে আয়া পর্যন্ত কর্মচারি।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে ৩ জন ডাক্তার, ৬ জন নার্স ও ৩ থেকে ৬ জন পরিচ্ছন্নকর্মী থাকা বাধ্যতামূলক। শয্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডাক্তার, নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মী আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। অথচ জেলার বেশীরভাগ হাসপালাত ও ক্লিনিকে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
বন্ধ করে দেওয়া শরীয়তপুর ডেন্টাল ক্লিনিকের পরিচালক নজরুল ইসলাম রিপন জানায়, এক পর্যায়ে তাদের ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন তারা সকল প্রকার কাগজপত্র হালনাগাদ করে পুনরায় ক্লিনিক চালু করেছেন। শরীয়তপুর ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, নিবন্ধন বিহীন বা অবৈধ কোন ক্লিনিক আমাদের সমিতির অন্তর্ভূক্ত না।
সমিতির আওতাভুক্ত না এমন কোন ক্লিনিক মালিককে মিটিং বা সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। সমিতির পক্ষ থেকে তাদের কোন পরামর্শ দিয়েও সহায়তা করি না। অবৈধ বা নিবন্ধণহীন ক্লিনিক বন্ধের জন্য আমরা প্রশাসনকে সহায়তা করে থাকি। এই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. এস.এম. আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, আমরা এই পর্যন্ত ৯টি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছি। সরকারী হাসপাতালে ডাক্তাররা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ করতে পারবে।
তবে দালাল নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। সরকারি হাস-পাতালের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোন বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠতে পারবে না এমন একটা খসড়া আইন তৈরী হয়েছিল। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি।
সরকারি হাসপাতালের দেয়াল ঘেষেও বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনে আইনী কোন বাঁধা নাই। জনবল সংকটের কারণে আমরা অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। তবে নিবন্ধন ছাড়া কোন ক্লিনিক ও হাসপাতাল থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।