শরীয়তপুরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয়, বিকল বয়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন

0
104

খোরশেদ আলম বাবুল, শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥ শরীয়তপুরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় লক্ষ করা গেছে। সবচেয়ে বেশী বিপর্যয় দেখা গেছে গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে। বায়োমেট্রিক হাজিরার ক্ষেত্রেও
নেই কার্যকরিতা।

সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষক ও কর্মচারী হাজিরা পদ্ধতিতে ফিরে আসায় গাফিলতি বেড়েছে অনেক বেশী। শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মূখী করতে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মরিয়া। আগামী বছরের মধ্যে অনেকটা বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন বলে আশাবাদি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও বিভিন্ন বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, জেলায় মোট ৬৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জেলার জাজিরা উপজেলা বাদে অন্য ৫টি উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রেক হাজিরা পদ্ধতির চালু ছিল। সেই সময় শিক্ষক উপস্থিতির হার সন্তোষজনক ও পাঠদানের ক্ষেত্রেও আন্তরিক ছিলেন তারা।

করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বিকল হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা চলে যায় কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসায়। দীর্ঘদিন পরে বিদ্যালয়ে খুলে দিলেও শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মধ্যে বেড়েছে স্বেচ্ছাচারিতা। প্রধান শিক্ষককেও মানতে নারাজ সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারি। সদর উপজেলার ৪২ নং তুলাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্ট্রারে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫ জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সেই বিদ্যালয়ে ভর্তি রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী গড় ছাত্র ছিল ১৮৫ জন।

পূর্বের ন্যায় এখনও সেই বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক পদায়ণ রয়েছে। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনও প্রধান শিক্ষকের কক্ষের দেয়ালে শাটানো রয়েছে অথচ পূর্বের মতো নেই বায়োমেট্রিক মেশিনের ব্যবহার। মেশিনে আঙ্গুল লাখলে কোন কাজ হয় না। তাই তারা খাতায় সাক্ষর করে উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তৈয়বুর রহমান জানায়, তার ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে করোনাকালীন সময়ে কিন্ডার গার্টেন, নূরানী ও হেফজ খানাসহ ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘ সময় যখন বিদ্যালয় বন্ধ ছিল তখন ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু ছিল।

করোনা কালে আমরা অনলাইন ক্লাশ করেছি। অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন ছিলনা আবার অনেকে অনলাইন ক্লাশ বুঝেনি। তাই অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের কিন্ডার গার্টেন ও মাদরাসায় ভর্তি করে দেয়। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে আমরা অভিভাবকদের কাছে বারবার গিয়েছেন।

যেহেতু ভর্তি করে ফেলেছি সেহেতু এক বছর সেখানে পড়–ক এমন দাবী অভিভাবকদের। তবে আগামী বছরের মধ্যে হয়তো শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মুখী করা সম্ভব হবে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে পার্শ্ববর্তী নিয়ামতপুর, চরচটাং ও চরপাতাং সরকারী প্রিাথমিক বিদ্যালয়ে।

তবে জেলা শহরের তুলাসার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে কিছুটা ভিন্নতা, ২০১৮ সালে সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৭ জন। চলতি বছরে সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯০৯ জন।

এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমলেও গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ঠিক আছে। তবে বিদ্যালয়ের সময় সূচি পরিবর্তণ হওয়ায় তার ব্যবহার নাই। নতুন সময় বায়োমেট্রিক মেশিনে শেট করা হলে অনেক মেশিন কাজ করবে।

শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এম.এম. মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ বন্ধে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কিন্ডার গার্টেন বা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন। আগামী বছরের মধ্যে সেই সকল শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে চেষ্টা চলছে। এই ধরনের সমস্য শহরাঞ্চলের চাইতে গ্রামাঞ্চলে বেশী লক্ষ করা গেছে। শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় এই সমস্য কাটিয়ে উঠতে পারব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here