ভিক্ষার অর্থে চলছে বীরমুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়ার জীবনযাপন! 

0
184
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ শত মায়ের রক্তে রঞ্জিত এই দেশ, আমরা পেয়েছি বাংলার স্বাধী-নতা। স্বাধীন দেশের মানুষ আজ মুক্ত হাওয়াই শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে চলাফেরা করছে। কিন্তু যারা সেই দিন লড়াকু সৈনিক এর মত যুদ্ধ করে লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, তারাই আজ কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য অবহেলিত।
বর্তমান সরকার দেশের সূর্য সন্তানদের মর্যাদা ও সম্মান দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের আর্থিকভাবে উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত বা স্বীকৃতি না পাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়ার জীবন চলে ভিক্ষার অর্থে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্বাধীনতা পক্ষের মানুষদের ও সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীরা যখন বাঙালির উপর নির্মম অত্যাচার চালায়, ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের নসু মিয়া বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
৭ নম্বর সেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী-নুরুজ্জামান এর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও তিনি নিজেই আজ অবহেলিত। ১৯৭১সালে দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তিনি।  একজন অবহেলিত, অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়া, তিনি মুক্তিযুদ্ধে সাহাপুর ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য নৌকায় উঠে বসলেন।
নৌকায় থাকা অবস্থায় পাক-হানাদার বাহিনীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে, কিন্তু নৌকায় শুয়ে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু ক্যাম্পে পৌঁছে সেখানে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। এরপর ইন্ডিয়া আদমপুর প্রাথমিক ট্রেনিং সেন্টারে ক্যাপ্টেন পানুয়ার কাছে মাসব্যাপী ট্রেনিং নেন।
তিনি প্রতিবেদককে বলেন, রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ চলাকালে আমি ঘটনাক্রমে ও আমার সহযোদ্ধারা জামবাড়ীয়া মাঠে একত্রিত হয়ে, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেখানে এসে উপস্থিত হলে আমাদের সকলকে যুদ্ধের জন্য কলাকৌশল শিখিয়ে দেন।
নসু মিয়ার সহযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন ও রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমরা একসাথে ট্রেনিং করেছি। একসাথে যুদ্ধ করেও তিনি যে কেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, সে বিষয়ে আমার জানা নেই। উপজেলার চৌডালা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এরফান আলী (চুটু মাস্টার) বলেন, তিনি আমার সাথে ট্রেনিং ও যুদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু কেন জানি, সেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হচ্ছে না, তারপর তার এই বিষয় নিয়ে আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। তিনি এখন বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এবং সয্যাশায়ী।
সরেজমিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়ার বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়া মাথা গোঁজার কোন ঠাই নেই। নেই কোন ভিটামাটি, খাস জমির উপর শুয়ে বসবাস তার, বাঁশ দিয়ে তৈরি করা অগোছালোভাবে জীবন যাপন অতিবাহিত করছে তিনি।
দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থতায় ভুগছেন অর্থ সংকটের কারণে, চিকিৎসা করাতে পারছেন না। যেহেতু তিনি চলাফেরা করতে পারে না, সেহেতু উপার্জন করতেও তিনি সক্ষম নন, তাই তাকে খুব কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সংসার চলছে কিভাবে? এই বিষয়ে প্রতিবেদক জানতে চাইলে, তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ভিক্ষাবৃত্তি করে যে সামান্য কিছু পাই, তা থেকে ঠেলে-ঠুলে পেট চলে।
লড়াকু সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি মূর্খ-সূর্খ মানুষ, আমি খাতা কলম তেমন বুঝি না, অফিস-আদালতে কেমন করে কি করতে হয় তা আমার জানা নেই, বাবা। তাই আজ আমার এই অবস্থা। কিন্তু তোমরা যদি কিছু করতে পারো, যদি করতে পারো তবে, আমি সার্থকতা লাভ করতে পারবো।
তাই জীবনে বেঁচে থাকা অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নসু মিয়ার একটাই দাবি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে সম্মান রেখে চলেছেন, দেশের আনাচে-কানাচে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের জীবন জীবিকার ও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছেন, তারই সুবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে নসু মিয়ার দিকে নজর দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি পাক, এমনটায় কামনা করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here