চাকরির শুরুতে ১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সোমবার থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে এক কোটিরও বেশি শিশু শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও কিছুটা দেরিতে পাঠ্যবই পেয়েছে। পুরোদমে ক্লাস শুরু করতেও এক-দেড়মাস দেরি হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে কখনও এক ঘণ্টা, কখনও দুই ঘণ্টা, আবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি করেছেন শিক্ষকরা। সামনে ঈদুল আজহার ছুটি। ৩ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ঈদ ও গরমের বন্ধ থাকবে। ফলে বছরের অর্ধেক সময় পার হলেও পর্যাপ্ত ক্লাস করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি (এস ১২০৬৮ ) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক জনাব আবুল কাশেম বিদ্যুৎ বলেন. শিক্ষাকার্যক্রম বিঘ্ন বা কোমলমতি শিশুদের পড়া-লেখা থেকে দুরে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে শেষ পর্যন্ত এই পথে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি। গত ১৯/০২/২০২০ ইং সালে আমাদেরকে ১৩তম গ্রেডে উন্নতি করা হলেও সু-কৌশলে টাইম স্কেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে আমরা ৩টি টাইম স্কেল পেতাম। বর্তমানে ২টি টাইম স্কেল দেওয়ার কথা বলা হলেও অদ্যবদি তা কার্যকর করা হয়নি-যা ভাওতাবাজী ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেকেই ১৫, ১৪, ১৩ বছর চাকুরী করে ১৩তম গ্রেডে উন্নত হলেও প্রাপ্ত টাইম স্কেল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই বৈষম্য দুর না হওয়া পর্যন্ত আমরা আনন্দেলন চলিয়ে যাব।
এদিকে, কর্মবিরতির ডাক দেওয়া প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। তারা ধারাবাহিকভাবে দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার তাদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা টানা কর্মবিরতি কর্মসূচি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সবশেষ তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫ জন। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে এক কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ জন। অর্থাৎ, প্রাথমিকের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫৬ শতাংশই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে দাবি আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে একবার আমরা বসেছি, সেখানে আমরা তেমন কোনো প্রতিশ্রুতি পাইনি। বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে নেমেছি আমরা। আশা করি, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।