চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তরিকুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল শনিবার শহরের শহীদ সাটু অডিটোরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সুধী সমাবেশে’ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তরিকুল আলম বক্তব্য দেয়ার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক লতিফুর রহমান বক্তব্য প্রদানে বাধা এবং অসৌজন্যমূলক আচরন করেন।
শেষ পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তরিকুল আলম ওই সমাবেশে বক্তব্য রাখতে পারেন নি। সমাবেশে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি, ছাত্র-জনতা উপস্থিত থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এমন বিরুপ আচরন ও কটাক্ষের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দিন। প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন স্থানের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদে সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল/২৫ তারিখ শনিবার বিকেল ৪ টার সময় শহরের শহীদ সাটু অডিটোরিয়ামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তরিকুল আলম, সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক), জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-কে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য লতিফুর রহমান।
এই ঘটনার প্রতিবাদে এই প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন। ‘আমরা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ও সকল মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পাশাপাশি জুলাই অভুত্থানে শহীদদের মাগফেরাত কামনা করছি’।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান।
এই সুধী সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র-জনতা ও অন্যান্য দলের নেতা সহ সুধীবৃন্দ। তাছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাংগঠনিক কমান্ডের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলম।
বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম, টেলিভিশন, ফেসবুক হতে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক) মোঃ তরিকুল আলম বক্তব্য দিতে গিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টকে না মেলানোর আহ্বান জানান।
এসময় সামনের সারিতে বসা জামায়াত নেতা লতিফুর রহমান উত্তেজিত হয়ে আঙুল উচিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলমের দিকে তেড়ে আসেন।
চিৎকার করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে জোরপূর্বক বক্তব্য বন্ধ করতে বাধ্য করেন। তরিকুল আলম তার বক্তব্য শেষ করার জন্য অনুরোধ জানালেও শেষ পর্যন্ত কোন বক্তব্য রাখতে পারেন নাই এবং জেলা পুলিশ তখন নীরব ভূমিকা পালন করেন।
বিষয়টি আমাদের জন্য লজ্জাজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক। এই ঘটনার পরপরই ডিআইজি সাহেবকে বিষয়টি জানিয়ে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আপনাদের জানাতে চাই-মুক্তিযুদ্ধ ও অভুত্থান এক নয়।
এই প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এরূপ বিরূপ আচরণ ও কটাক্ষের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে যেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এরূপ বিরূপ আচরণ ও কটাক্ষ করা না হয়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
এছাড়া, অমুক্তিযোদ্ধা খাইরুল ইসলাম কর্তৃক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রকাশ ও ২৮/৪/২০২৫ তারিখ নয়াদিগন্ত পত্রিকায় এবং দিগন্ত টেলিভিশনে মিথ্যা ও অপ্রাসংগিক সাক্ষাতকার প্রকাশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এছাড়াও খাইরুল ইসলাম ২৮/০৪/২০২৫ ইং তারিখ নয়াদিগন্ত পত্রিকা ও দিগন্ত টেলিভিশনে ১৯জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অত্যন্ত অশালীন, আপত্তিকর, মিথ্যা ও বানোয়াট ভাষা ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ ও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে তারও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।