বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাটপনিউজ২৪.কম-এ দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে। সরাসরি যোগাযোগ করুন -banglatopnews24@gmail.com. মোবাইল-০১৭৪৩৯৯৮৭৪১.

আমার মা ‘বিশ্ব সেরা’

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
  • আপডেটের সময়: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
  • ৫১৬ সময় দেখুন

আমার মা বাল্যশিক্ষা পর্যন্ত পড়া। বাবা পঞ্চম শ্রেণী পাশ ছিলেন। বাবা কৃষিকাজ ও ডিলারী করতেন। সে-কালে ডিলারদের অনেক মূল্য ছিল। সরকারের সমস্ত রিলিফ স্বল্প মূল্যে ডিলারদের মাধ্যমে জনগনের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হতো। সাধারনত সৎ ও ভাল মনের মানুষদেরকেই ডিলার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হতো। আর ডিলারী ব্যবসাটা আমাদের পৈতৃক ব্যবসা। সেজু ভাই এখনো বাবার ডিলারী ব্যবসা ধরে রেখেছেন।

আমাদের বাড়ী, ‘ডিলার বাড়ী’ হিসাবে পরিচিত। সাটুরিয়া উপজেলার না হলেও; অন্তত দিঘলীয়া ইউনিয়নের প্রত্যেক গ্রামের মানুষই আমার বাবাকে কম-বেশী চিনেন। আমার বাবার নাম হাবিবুর রহমান হলেও সকলে ‘হবি ডিলার’ হিসাবে বেশী চিনেন।

আমাদের বাড়ীতে রিলিফের মাল ডেলিভারি দেওয়ার দিন, হাজারো মানুষের উল্ল্যাস, চেঁচামেচি আর হাঁক-ডাক লেগেই থাকতো। বাবার সকল কাজের প্রধান সাহায্যকারী, পরার্মশক কিম্বা বিষান্নতাভোগি ছিলেন আমার মা ‘জাবেদা বেগম’।

সে কালে মেয়েরা স্বামীর নাম ধরে ডাকতো না-অমঙ্গলের আশঙ্কায়। তাছাড়া এটি ছিল স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অঘাত ভালবাসা এবং সীমাহীন শ্রদ্ধায় বিষয়। মা বাবাকে ‘এ্যাঁদু শুনছ নাকি’ বলে ডাকতো। চাল, চিনি, ডাল, লবন ও তেল বিতরণ করার জন্য আমাদের বাহির বাড়ীতে আলাদা একটি ঘর ছিল। যাকে আমরা ‘বাংলাঘর’ বলে জানতাম। সারা দিন ‘বাংলাঘরে’ বাবা চাল, চিনি. ডাল. লবন ও তেল বিলি করতেন আর নালিশ জমা হতো মায়ের রান্না ঘরে।

নালিশের পাল্লা অধিক- ভরি হলে মা রান্না ঘর হতে বাহির হয়ে ‘বাংলাঘরের’ পাশে গিয়ে হালকা স্বরে কাশ দিতেন। হাজারো লোকে ভীড়ে থাকলেও বাবা মায়ের সেই কাশের স্বর বুঝতে পারতেন। তাৎক্ষণিক তিনি সকল কাজ রেখে – মায়ের সাথে কথা বলার জন্য বাহিরে ছুঁটে আসতেন এবং ক্যাচু-ম্যাচু হয়ে বলতেন কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বল।

মা, হুকুমের সুরে বলতেন, ছমিরন চাল, ডাল ও চিনি পায়নি কেন? ওর পরিবারে তিন জন লোক। হিসাব অনুয়ায়ী সে ছয় কেজী চাল, দুই কেজী ডাল ও এক কেজী চিনি পাওয়ার কথা। নয়া মিয়াকে দিয়ে চাল, ডাল, ও চিনি রান্না ঘরে পাঠিয়ে দিও। টাকার জন্য চিন্তা করো না। ওটা আমার কাছে জমা দিয়েছে। মায়ের কথা মত চাল, ডাল ও চিনি রান্না ঘরে পৌঁছিয়ে যেত। বাবার শতঃ ইতস্ততায় কোন ফয়দা হতো না।

এ দিকে ছমিরন রান্না ঘরে, বসে উনুঁনে আগুন দিয়ে ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কাঁদতো- ভাউজ কি করি, কি করি বলে। মায়ের হাত হতে চাল, ডাল ও চিনি পেয়ে বাড়ী যাবার সময় সে মায়ের পা ছুঁতে চাইলে, মা তাকে বুঁকে জড়িয়ে নিতেন। ছমিরণ, বাউজ! বাউজ! বলে আবেগে মায়ের বুঁকে ঢলে পড়তো। তখনকার সমাজে অর্থহীন বিত্তহীন ছমিরণদের একমাত্র ভরসা ছিলেন আমার মা। এই সকল ঘটনা, এক-দুই দিনের নয়, নিত্যই আমাদের বাড়ীতে ঘটতে দেখেছি।

অবসর সন্ধ্যায়, পাড়ার আফাজ পাগলা, রসুলদী কাকু, সুলতান মাষ্টার, জিন্দা পাগলা, মজিবর ডাক্তার, আকালী কাকু আমাদের বাড়ীতে আসতেন। বাড়ীর উঠানে জমিয়ে বৈঠকি গানের আসর বসতো। বাবার কন্ঠে –‘সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে.. গানশুনে মা খুব কান্না কাটি করতেন। আমি তখন ছোট। মায়ের কোলে বসে ফ্যাঁল-ফ্যাঁলিয়ে সকলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

বাবা প্রায়ত হয়েছেন আজ প্রায় ২৫ বছর। মায়ের বয়স এখন ৯৭ এর কাছাকাছি। ভাল ভাবে চোখে দেখেন না। আমাদের চাচিতারা বাজার সংলগ্ন চল্লিশ শতকের বাড়ীর ছোট একটি ঘরে মা থাকেন অনেকটা একাকী ও নিবৃত্তচারী হয়ে। আমরা তিন ভাই ঢাকা থাকি। সকলের-ই, সময়ের খুব অভাব। মায়ের খোজঁ-খবর তেমন রাখতে পারি না। কিন্তু মা নিত্যই আমাদের খোজঁ-খবর রাখেন। সাপ্তাহের প্রতি শুক্রবার তিনি নির্ঘুম রাত কাটান-আমাদের বাড়ী আসার পথ চেয়ে। শুবার ঘরের বারান্দায় এসে বসে থাকেন, আর মাঝে মাঝে হাকঁ তুলেন ‘বৌমা কে এলো গো..বলে।

আমি মায়ের ছোট সন্তান। ছোট থেকেই মায়ের আদরের। এখন বড় হয়েছি, তাই আর মায়ের কাছে তেমন বসা হয়না। প্রতি দিনের মতো খাবার শেষে মায়ের আচঁলে হাত মুছাঁ হয়না, মায়ের কাছে বায়না ধরতে হয় না। মায়ের নতুন কাথাঁ সিলায়ের পাটিতে গড়াগড়ি দিতে হয় না। কিম্বা মায়ের আচঁলের খিটঁ খোলে টাকাও চুরি করতে হয় না। এখন, বৌয়ের মরমী আচলের সুঘ্রান- সুভাশে মায়ের ভালবাসাকে সমাধি দিয়েছি।

আজ ‘বিশ্ব মা দিবস’। তাই কাগজে দুই-ছত্র লিখে মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ জানালাম। জানি, এটি নিন্দণীয়। তবু মনের আবেগ-ও প্রসন্নতাকে জন- সমাজে প্রচারে মন চায়।

পৃথিবী বড়ই অদ্ভূত। জন্মদাত্রী এখানে অ-প্রয়োজনে অশ্রাহীনা হয়। ব্যক্তিক সুযোগ- সুবিধার কাছে এখানে, ভগবান অসহায়। ভালো লাগা আর ভালবাসা এখানে বিনিময়ে বিক্রি হয়। কিন্তু মাতৃত্ব- আর পিতার ভালবাসা কালের স্রোতের মতই বহমান থেকে যায়।

মা ,আমি বড় অসহায়, অভাগা ছেলে। আজ ‘বিশ্ব মা দিবস। অবনত মস্তককে তোমাকে প্রনাম করছি। সময়ের ভেড়া জালে আমরা জাগতিক। কিন্তু তোমার ভালোবাসার শূণ্যেতা আমাদের সব সময় কাঁদায়। এই বিশ্ব মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি অগাত শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাই।

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সদস্য জাতীয় নাগরিক পার্টি-মানিকগঞ্জ জেলা শাখা।

 

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

এই বিভাগের আরও খবর...
© All rights reserved © ২০২৫ বাংলা টপ নিউজ ২৪
ESAITBD Sof-Lab UAE/BD

Warning: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'mysqli.so' (tried: /opt/alt/php82/usr/lib64/php/modules/mysqli.so (/opt/alt/php82/usr/lib64/php/modules/mysqli.so: undefined symbol: mysqlnd_global_stats), /opt/alt/php82/usr/lib64/php/modules/mysqli.so.so (/opt/alt/php82/usr/lib64/php/modules/mysqli.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory)) in Unknown on line 0