শরীয়তপুর প্রতিনিধি : টানা চার দিনের বৃষ্টিতে শরীয়তপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পৌরসভার নিন্মাঞ্চলের অনেকের বসত ঘরেও ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সামনে পানি জমে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের সামনে হাঁটু পানি জমে নিচতলায় পানি ঢুকে পরায় কর্মচারীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে নিন্ম আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। সড়কে যানবাহন চলাচল করছে তুলনামূলক কম। স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল খুবই কম। ব্যবসা বানিজ্যেও পড়েছে বিরুপ প্রভাব।
পৌর নাগরিকদের দাবী জেলা শহরে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অধিকাংশ খাল ও জলাশয় ভরাট করে ফেলায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের দাবী প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকার কারণে সব এলকায় এখনও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যে সব এলাকায় জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে ওই সব এলাকায় পৌরবাসীর কথা মাথায় রেখে শ্রমিকদের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শরীয়তপুর পৌরসভা ও স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, ১৯৮৫ সালে শরীয়তপুর পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ২৪ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটারের এই পৌরসভা ২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়।
২০২৫ সাল পর্যন্ত এই পৌরসভায় মোট ড্রেনেজ হয়েছে ১০ কিলোমিটার, কাজ চলমান জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে ৬৭০ মিটার ও পালং স্কুল এলাকা থেকে শাবনুর মার্কেট পর্যন্ত ৬৬০ মিটার। ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী ৭০ হাজার ৫শ জনসংখ্যার এই পৌরসভায় মোট ভোটর রয়েছে ৩৯ হাজার ৭৯ জন।
গত রবিবার থেকে শরীয়তপুরে অবিরাম ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। টানা এই বৃষ্টিতে পৌরসভার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাহির হয় না। কর্মহীন হয়ে পড়ায় দুঃশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন অনেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মাঠ, সিভিল সার্জন অফিস, শরীয়তপুর মডেল টাউনের পশ্চিম পাশের্^ চর পালং এলাকার কয়েকটি বাড়ির ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পরেছে।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচড়া, পুরান হাসপাতাল রোড, শরীয়তপুর পার্ক, শিল্পকলা, সদর ভূমি অফিসের উত্তর পাশ দিয়ে পাহাড় বাড়ি রোড, তুলাসার, নিরালা আবাসিক এলাকা, শান্তিনগর ও বেপারী পাড়াসহ পৌরসভার নিন্মাঞ্চলগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
চরপালং এলাকার মজিবুর মাদবর বলেন, আমাদের এলাকাটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকার পানি জমে ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। শহরের আশে পাশের খালগুলো খনন না করা হলে এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করা না হলে আমাদের এই দুর্ভোগ কমবে না।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিসের জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক এম এম হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ভবনের কোন দিক দিয়ে পানি নিষ্কানের ব্যবস্থা নেই। ভারি বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতা দেখা দেয়। সিভিল সার্জন অফিসের নিচ তলায় বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে আমাদের অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
জেলা বিডি ক্লিনের উপদেষ্টা এডভোকেট মো. মাসুদুর রহমান বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর একমাত্র কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাল দখল ও ভড়াট হওয়ার হওয়া।
পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশানের হস্তক্ষেপে খাল উদ্ধার করে পানিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরশন হবে। অন্যথায় এই জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে না।
শরীয়তপুর সদর হাসাপালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. রফিকুল ইসলাম মামুন বলেন, একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের সামনে পানি জমে জলা বদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এর মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। এ বিষয়ে আমরা শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময় তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, পৌরসভার ড্রেনেজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ না থাকা আমরা এখনও প্রতিটি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে পারিনি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও খাল ভড়াট করার কারণে শহরের কিছু নিঁচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার পালং স্কুল থেকে শাবনূর মার্কেট ও চৌরঙ্গী থেকে মারকাজ মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সেই ক্ষেত্রেও ড্রেন করার জন্য কিছু কিছু বাড়ির মালিকরা বাঁধা দেওয়ায় ড্রেন করতে বেগ পেতে হয়।
পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের জন্য ১০ জন শ্রমিক সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রাস্তায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করছেন। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই জলাবদ্ধতা দুর করা সম্ভব হবে।