চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ “শিশুর শৈশব মানেই খেলাধুলা, শিক্ষা আর
রঙিন স্বপ্ন”-কিন্তু বাল্যবিবাহ নামের অমানিশা সেই শৈশব কেড়ে নিয়ে ভবিষ্যৎকে করে দেয় অন্ধকার। অবশেষে সেই অন্ধকার ভেদ করে নতুন ইতিহাস গড়ল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়ো-জিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়, শিবগঞ্জ এখন বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপ-জেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজাহার আলী।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজু উইলিয়াম রোজারিও, উপ- পরি-চালক (ফিল্ড অপারেশন, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী অঞ্চল), ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ রবিউল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কিবরিয়া।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, দুর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুহাঃ আযম আলী, মোরগপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাহমুদুল হক (হায়দারি), শাহবাজপুর জামে মসজিদের ইমাম মোঃ তহসিন এবং অন্যান্য জন-প্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুধীজন।
অনুষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল “স্ট্রেংদেনিং সোশ্যাল এন্ডবিহেভিয়ার চেঞ্জ প্রকল্প, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।” স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সিনিয়র ম্যানেজার এরিয়া কো-অর্ডিনেশন (রাজশাহী অফিস) লোটাস চিসিম।
অনুষ্ঠানের আবেগঘন মুহূর্ত ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের এক কিশোরী সুমিতা খাতুন, যিনি বাল্যবিবাহের হাত থেকে ফিরে এসেছেন, সাক্ষ্য হিসেবে তার জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। কণ্ঠ ভারী করে তিনি বলেন— “আজ আমি পড়াশোনা করছি, স্বপ্ন দেখছি। এই ঘোষণা আমাকে নতুন জীবনের সাহস দিয়েছে।”
একজন মা চোখ ভিজে গিয়ে বলেন, “আজ থেকে আমি নিশ্চিত হলাম, আমার মেয়ের জীবন আর বাল্যবিবাহের অন্ধকারে হারাবে না।” বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহ কেবল একটি শিশুর নয়, বরং পুরো জাতির স্বপ্নকে ধ্বংস করে।
শিবগঞ্জের এই ঘোষণা শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি শিশুদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার। শিক্ষার্থীরা এদিন শপথ নেয় তারা শিক্ষার আলোয় নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়বে এবং সমাজে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাণের উচ্ছ্বাসবাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণার পর আয়োজন করা হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, কবিতা আর নাচে ভরে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাসে প্রমাণ হয় তাদের স্বপ্ন এখন মুক্ত আকাশে ওড়ার।
শিবগঞ্জের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা কেবল একটি উপজেলার নয়—বরং এটি গোটা বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা। এ পথ ধরে এগোলে অদূর ভবিষ্যতেই বাংলাদেশ হবে “বাল্যবিবাহমুক্ত দেশ”।