মানিকগঞ্জে দুই সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। দম্পত্য কলহের কারণে এমনটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
জানাগেছে, শাহিন আহমেদ ও শেখা আক্তার দম্পতির দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে। স্ত্রী ও সন্তানদের ঠিকমতো ভরণপোষণ করতেন না স্বামী শাহিন আহমেদ। এ নিয়ে দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ ছিল তাঁদের মধ্যে।
সর্বশেষ গত সোমবার দিনের বেলায় স্ত্রী শেখা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহিনের। মুঠোফোনে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে দুই শিশুসন্তানকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যার পর শেখা আত্মহত্যা করেন।
আজ বুধবার দুপুরে শেখা আক্তারের বাবা শেখ ছামাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুঠোফোনে এ কথাগুলো বলেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন বলেন, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জের ধরে সন্তানদের বিষাক্ত পদার্থ খাইয়ে হত্যার পর ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে দুই সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আজ সকালে শেখা আক্তারের বাবা শেখ ছামাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট বছর আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া গ্রামের শেখ ছামাদের ছোট মেয়ে শেখা আক্তারের (৩০)। এর পর থেকে এক বছর বয়সী এক ছেলেসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছিলেন তিনি।
প্রায় তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকার শাহিন আহমেদের (৪০) সঙ্গে শেখার আবার বিয়ে হয়। পরে শাহিন ও শেখা দম্পতির সংসারে মেয়ে সাইফা ইসলামের জন্ম হয়। প্রায় দুই মাস আগে দুই সন্তানকে নিয়ে জেলা শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকায় দ্বিতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শাহিন ও শেখা দম্পতি থাকতেন।
ফ্ল্যাটে ওঠার প্রায় দুই সপ্তাহ পর মালয়েশিয়ায় চলে যান শাহিন। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে বাসার মালিকের ছেলে ওই ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেওয়ার জন্য দরজায় গিয়ে ডাকাডাকি করে ভেতর থেকে সাড়াশব্দ পাননি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবার দরজায় গিয়ে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন বাসার মালিক।
পরে দুপুরে ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে পুলিশ। এ সময় ফ্ল্যাটের একটি কক্ষের মেঝেতে দুই শিশুসন্তান ও খাটের ওপর তাদের মা শেখা আক্তারের লাশ পড়ে থাকতে দেখে তারা। পরে লাশগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
আজ দুপুরে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তিনজনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ।
তিনি বলেন, দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে দুই সন্তানকে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট খাইয়ে ওই নারী আত্মহত্যা করেছেন বলেন প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। মৃত নারীর বাবা এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।