বাঙ্গালী জাতি এক অদৃষ্টবিশ্বাসী পলায়নপর জাতি। বুদ্ধিহীন দৈন্যতা এই জাতিকে ক্রমাগত অধঃ পতনের দিকেই ধাপিত করছে। জাতির যুগযুগান্তরের ইতিহাস; এই সত্যেকেই স্বাক্ষ্য দেয়।
সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ অব্দি জাতির এই দুর্বলতার সুযোগে ক্রমাগত লুট হয়েই চলেছে বাংলার সম্পদ, সংস্কৃতি, ভাষা, জাতীয়তা ও জাতীয় চরিত্র। যুগ যুগ ধরে নিরষ্কুশ ভাবে প্রমানিত হয়েছে শাসক শ্রেনীর ‘ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের চক্রান্ত। ফলে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও জাতি তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। এই ব্যর্থতা জাতির জীবনে কলংক।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীনের পর থেকেই বাংলা ভূ-খন্ডে পালাবদলের রাজনীতি শুরু হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। বিগত সময় গুলোতে রাজনৈতিক সরকার গুলো স্বনির্ভর আর স্বচ্ছ গণতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে জনগনকে ফুসলিয়ে- ক্ষমতা দখল করে ক্ষত-বিক্ষত করছে ‘গোটা জাতি ও জাতীয় স্বার্থকে। অসীম ক্ষমতায় কুক্ষিগত করছে রাষ্ট্রীয় দখলদারিত্ব।
নির্বাচিত অধিকাংশ নেতারাই জাতীয় স্বার্থের নামে ‘মূলা, ঝুলিয়ে স্ব-দলীয় কিম্বা ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে পৃথিবীর নিকৃষ্ঠ ও জঘন্যতম পন্থা অবলম্বনেরও পিছপা হয়নি। সভ্যতার হাজার বছরের ঐতিহাসিক শিক্ষাকে বৃদ্ধ আঙ্গুলি দেখিয়ে কুখ্যাত ইউরোপিয় দানব চতুদর্শ/ ষোড়শ লুইয়ের ন্যায় চিৎকার করে বলছে“ আমিই ধর্ম, আমিই রাষ্ট্র, আমিই আইন,।
একথা সত্য যে, প্রাচীন কালে ‘বাহুবল আর ক্ষমতা- রাজনীতির নিয়ামক ছিল। সভ্যতার এই আধুনিক যুগে রাজনীতির সংজ্ঞার পরিবর্তন ও পরিমার্জন হয়েছে। আধুনিক কালের রাজনীতির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে Politic is the public service for national Interest. অথচ বাংলাদেশের রাজনীতি সদা-সর্বদা উল্টু পথেই হাঁটছে।
গোটি কয়েক নেতা ছাড়া দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই জনগনের সেবার অন্তরালে হত্যা, লুন্ঠন ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার রাজনীতি নিয়ে ব্যতি-ব্যস্ত। দেশের প্রত্যেক মহল্লা কিম্বা পাড়ার শ্রেষ্ঠ দুস্কৃতিকারী ও বখাটেরা রাজনৈতিক নেতার পরিচয়ে স্ব-স্ব এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্বার্থের কারনে এক নেতা আরেক নেতাকে গুম কিম্বা হত্যা করে লাশ বেওয়ারীশ করে দিচ্ছে। দলীয় ক্ষমতায় মদদপুষ্ট ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।
পক্ষ-প্রতিপক্ষকে রগ কেঁটে সারা জীবনের জন্য পুঙ্গ করা কিম্বা হত্যা করে লাশ গুম করতেও দ্বিধা করছে না। সত্যের জয় ধ্বনি করায় সত্যনিষ্ট সাংবাদিক সাগর-রুনিদের সন্ত্রসীদের হাতে জীবন দিতে হচ্ছে অবুঝ শিশুকে বোবা কান্না উপহার দিয়ে। বেকারত্বে যাতা কলে পৃষ্ঠ হয়ে সাংবাদিক মিনার মাহমুদদের আত্মহত্যা করে প্রমান করতে হচ্ছে ‘প্রানের চেয়ে মান বড়,।
মৌলবাদীরা ধর্মের নামে ধর্মপ্রান মানুষকে সত্য বলার অধিকারকে সংকুচিত করছে ক্রমাগত । রাজনৈতিক স্বার্থ হাঁসিলে এই বাজী খেলায় ঢোল পিটাচ্ছে অন্ধকারে থাকা আলী বাবার ‘চেরাগদৈত্য’।
আন্তজার্তিক শত্রুরা জাতিগত ঐক্যতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার ধোঁয়া তুলে ফেলানীদের কাঁটা তারের বেড়ায় ঝুঁলিয়ে নৃসংশ ভাবে হত্যা করছে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে যুগ যুগ ধরে জিয়িয়ে রাখছে অসংখ্য জাতীয় সমস্যাকে।
এক-বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক নতুন মেরু করনে ক্রমে ক্রমেই বাংলা ভূ-খন্ডটি হয়ে উঠছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সমগ্র বিশ্বের পরা শক্তিগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা লাভে বাংলাদেশের দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে ধাবমান রয়েছে।
ইতিমধ্যে পৃথিবীর ধনি রাষ্ট্র আমেরিকা ও পরাশক্তি রাশিয়া ‘নর্থ-আটল্যান্টিক, এলাকা ছেড়ে অধিক অর্থনৈতিক সুবিধা লাভে তীক্ষ্ন নজর দিয়েছে ‘এশিয়া-প্রশান্তমহাসগরীয়, এলাকার দিকে।
পরিসংখ্যান, বিশ্ব জনসংখ্যার ৭০/৮০ ভাগ লোকের বাস ‘এশিয়া-প্রশান্ত-মহাসগরীয়, অঞ্চলটিতে স্বল্প-বিস্তারে চীন ও ভারত অধিক সুবিধা নিলেও বিদ্যূৎ গতিতে ধেঁয়ে আসছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো।
পৃথিবীর ষোলতম বৃহৎ বাজার বাংলাদেশ ভুগৌলিক কারনেই ‘এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয়, অঞ্চলের প্রবেশ দ্বার। বাজার ব্যবস্থাপনার দিক থেকে চীন ও আমেরিকার কাছে শ্রেষ্ঠস্থান বাংলাদেশ। ছলে বলে কলে কৌশলে রাজনৈতিক ইস্যুকে অজুহাত করে বার বার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে ভারত।
তাই, একদিকে দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতা দখল নিয়ে ‘রাজনৈতিক দুস্যিপনা, অপর দিকে বহিঃশক্তির অর্থণীতি দখলে লোলুপ দৃষ্টি থেকে, দেশকে বাচঁতে হলে জাতীয় ঐক্য ও সর্ব সাধারনের রাজনৈকি সচেতনতা এই সময়ে একান্তই প্রয়োজন!https://forum.daffodilvarsity.edu.bd/index.php/topic,62148.msg157566.html#msg157566