এখন ভালবাসা চলে মেসেঞ্জার কিংবা হোয়্যাটসঅ্যাপে। নির্জনে ঘরের পিছন, পড়ার টেবিল ঘেষা জানালারদ্বার কিম্বা স্কুল ফেরার পথে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দিন শেষ।
এখন ভালবাসার প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সহজ ও সস্তায় ‘আই লাভ ইউ’ বলায়। পরিবর্তনের এই ধারায় অন্তত আমাদের দেশে ভালবাসা এখন সস্তা, ও নিদিষ্ট দিনে ‘ভালবাসা দিবস’ উদযাপন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
অসভ্য যুগ থেকে মানুষ সভ্য যুগে প্রবেশ করেছে ভালবাসাকে আশ্রয় করে।বহুকাল থেকেই ভালোবাসাকে আশ্রয় করে মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধন গড়ে উঠেছে। ভালোবাসার শক্তিতে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আবার এই ভালোবাসার অভাবেই মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাই মানব জীবনে ভালবাসার গুরুত্ব এককথায় অপরীসিম।
এ গুরুত্বকে পরিস্ফুটন করতে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ ভালো-বাসার জন্য একটি নিদিষ্ট দিবস উদাপন করে আসছে যার নাম ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। আজ ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে,। আমার শুভার্থী সকলকে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।
আজকের দিনটি আবালবৃদ্ধবনিতা সবার হলেও, প্রধানত তারুণ্যের জয়জয়কারই সর্বত্র। এই দিনটি নিয়ে আমার লেখার দেরী হলেও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো নানা ধরনের ট্রলে এবং স্ট্যাটাসে ভরে গেছে।
অনেকের আবার বক্তব্য, এই ভালোবাসা দিবসে তাদের কোনো সঙ্গী না থাকায় তারা অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। ভাবতেই পারছেন না কিভাবে তারা এই দিবসটি পালন করবেন।
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ ঐতিহাসীক বর্ননায় মতান্তর রয়েছে। ঠিক কবে, কখন, কোথা থেকে এ ভালোবাসা দিবস উদযাপনের সূচনা তা নিয়ে মতবাদের অন্তঃ নেই।
কেউ কেউ মনে করেন, ভালোবাসা দিবস পালিত হয় প্রাচীন রোমের প্রেমের দেবী জুনোকে স্মরণ করে। আবার কারো কারো মতে ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর করুণ হৃদয়- বিদারক প্রেমের কাহিনীকে স্মরণীয় করে রাখতে।
জানা যায়, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন রোমের এক সাহসী ও হৃদয়বান বীর। তার জীবদ্দশায় রোমের রাজা ক্লোডিয়াস ছিলেন এক নিষ্ঠুর শাসক। হঠাৎ তার ভ্রম হয়েছিল যে, বিবাহিত সৈন্যদের চেয়ে অবিবাহিত সৈন্যরা বেশি কর্মঠ ও শক্তিশালী। এমন মনোভাব থেকে তিনি তরুণ বীরদের বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন।
তাঁর এই নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে ভ্যালেনন্টাইন্স তরুণদের গোপনে বিয়ে দেয়া শুরু করলে রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ভ্যালে-ন্টাইনের এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল আজকের এই তারিখে অর্থাৎ ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে।
ঘটনা প্রসঙ্গে লোকশ্রুতিতে রয়েছে যে, কারাগারে থাকা অবস্থায় ভ্যালেন্টাইন এক কারারক্ষী নারীর প্রেমে পরেন। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে সে তাঁর প্রেমিকাকে একটি মিষ্টি চিঠি লিখেছিলেন যার শেষে লিখেন – ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’। সেই থেকেই পালিত হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে” বা ভালবাসা দিবস।
গবেষণা বলে প্রেমে পড়লে মানুষের আত্মঃবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যায়। এর জন্য হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াও সচল হয় যা জীবনে সফলতার ছোঁয়া বয়ে আনে। তাই জীবনের সাফল্যের জন্য একবার হলেও প্রত্যেকটি মানুষ কে প্রেমে পরা প্রয়োজন।
একথা সত্য যে, কর্মময় জীবনে আমরা সকলেই ব্যাতি-ব্যস্ত, সময় পার করি। আর ভালবাসার মানুষটি হলো সকল ক্লান্তি দূরীকরণের অসাধারন মেডিসিন। যার সংস্পর্শে ও অতুলনীয় সৌন্দর্যে দিনশেষে মুগ্ধ হয় প্রিয়জনরা।
অনিন্দন যে, একজন মানুষ প্রেমিক/প্রেমিকা হলে অনায়েশেই সে নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে তার জীবণে ধীর- স্থীরতা আসে এবং জীবনে সফলতা অনিবার্য হয়ে উঠে।