বাংলাদেশের জন্য একটি বিপ্লবী সরকার প্রয়োজন। কেবল মাত্র, জ্ঞান-দিপ্ত-বিপ্লবী সরকারই পারে এই অদৃষ্টবিশ্বাসী পরায়নপর বাঙ্গালী জাতিকে পরিশুদ্ধ করতে। ডানপন্থী, বামপন্থী কিম্বা মধ্যপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শ বাঙ্গলী জাতিকে কোন দিন আকৃষ্ট করতে পারে নাই এবং ভাবিষ্যতেও যে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষন করলে এ সত্য দিবালোকের মত স্পষ্ট। শশাংক, চন্দ্রগুপ্ত মোর্য কিম্বা বখতিয়ার খিলজীর মত বিপ্লবী চেতনাই পারে, নতুন স্লোগানে- নতুন বাংলাদেশ গড়তে।
আমরাও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের রাজনীতি ও শাসন কাল দেখেছি। এরা কি ভাবে- ডান, বাম কিম্বা মধ্যপন্থীর স্লোগান দিয়ে সাধারন জনতার সম্পদ লুটে নিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষদের ভাগ্যে ‘থাবা’ মেরে রাতারাতিই বিত্তশালী হয়েছে। ধারাপরিক্রমায়, রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র চালু করেছে।
নিজেদের অধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য পাইক-পিয়াদাদের দ্বারা-সন্ত্রাসী ও পেশীশক্তির রাজনীতি চালু করেছে। জন-শান্তির ‘ছবক’ দিয়ে ‘অঘোষিত রাবনের রাজ্য কায়েম করেছে। স্বদেশী সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। প্রশাসনিক কাঠামোতে দলীয় লোক নিয়োগ করে চাটুকার ও তুষামুদি শ্রেণী সৃষ্টি করেছে। সারাদেশের মোট সম্পদের ৭৫ ভাগ দখলে করে এখন তারা জনসেবার স্লোগান দিচ্ছে।
বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরে রাজনীতির ইতিহাস ছিল, সাধারন মানুষের সম্পদ লুটের ইতিহাস।সচেতন বিবেকের কান্নাঁর ইতিহাস। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সম্পদ দখলবাজীর ইতিহাস।
এই ক্ষেত্রে, ২৪‘শের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে‘একটি কালো অধ্যায় পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এই বিপ্লবে, শত শহীদের মাঝে সাত বছরের শিশুর বুকে তাজা রক্ত, পরাধীনতার শৃংখলমুক্তির সাহসী আহ্ববান- বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ২৪‘শের জুলাই বিপ্লব ছিল, একটি সচেতন বিবেকের আত্ম-চিৎকার। নির্যাতিত মানুষের মুক্তির স্লোগান। বিপন্ন মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার। তাই, এই বিপ্লবের সফলতা, একটি নতুন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠণের মুল প্রেরনা।
পরিপ্রেক্ষিত যে, শোষকদের হাত হতে বাচঁতে হলে একটি সচেতন শিক্ষিত সমাজের নেতৃত্বে জীবনমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। চিরাচরিৎ নির্বাচনের পথরোদ্ধ করে, জনসমর্থনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসনের সর্বচ্চ থেকে আরম্ভ করে সর্বত্রই চাটুকার, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদেরকে বিতারিত করতে হবে, যা কেবলমাত্র একটি বিপ্লবী সরকারের দ্বারাই সম্ভব।
এ কথা কোনমতেই, অস্বীকার করার উপায় নাই যে, আজ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পাড়া, মহল্লা কিম্বা শহরের অলি-গলি, দুর্নীতিবাজদের অভয় অরণ্যে পরিনত হয়েছে। অ-পরিশুদ্ধ রাজনীতির স্লোগান দিয়ে এরা বাংলাদেশকে গিলে খেতে বসেছে। ডান-বামে ভাগ হয়ে পালাক্রমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে নিচ্ছে। তাদের এই ‘রাহু-গ্রাস’ রাজনীতি পালাক্রমে জন্ম দিচ্ছে দানবীয় স্বৈরাচারের।
তাই একটি বিপ্লবী সরকর গঠন ও তার প্রশাসনিক বিস্তৃতিই সকল কান্নাঁর অবসান ঘটাতে পারে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসাবে আমাদের এই চাওয়া এখন সময়ের দাবি।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি, সাটুরিয়া উপজেলা শাখা