কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত একতরফাভাবে ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। জবাবে ইসলামাবাদ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপ যুদ্ধ ঘোষণার শামিল এবং তার জবাব দেওয়া হবে সকল ধরনের প্রচলিত ও অপ্রচলিত (অর্থাৎ পরমাণু) শক্তি দিয়ে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি গত বুধবার চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, পানি হচ্ছে দেশের জীবনরেখা, যা ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তাই পানির প্রবাহ বন্ধ করা হলে তা যুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জবাবে পাকিস্তান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতেও দ্বিধা করবে না।
এনএসসি বৈঠকের পর জারি করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ বা ভিন্ন দিকে সরানোর যে কোনও প্রচেষ্টা এবং নদীর নিচু তীরবর্তী অঞ্চলের অধিকার হরণকে যুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় শক্তির সম্পূর্ণ পরিসরে পূর্ণ শক্তি দিয়ে তার জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ভারত সরকারের আরোপিত অভিযোগগুলোকে প্রত্যাখ্যান করছি, দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। ভারতশাসিত কাশ্মীরে কর্মরত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।
এছাড়া পাকিস্তান সার্ক কর্মসূচির অধীনে ভারতীয়দের জন্য প্রদত্ত ভিসা স্থগিত করেছে এবং শিখ তীর্থযাত্রী ব্যতীত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার জামাত আলী শাহ মনে করেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কৌশল ও জনমত শান্ত করার একটি প্রচেষ্টা কারণ চুক্তি অনুযায়ী, এটি একতরফাভাবে বাতিল বা স্থগিত করা সম্ভব নয়। যেকোনও পরিবর্তনের জন্য দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতি প্রয়োজন।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তারা স্থগিতশব্দটি ব্যবহার করেছে বাতিল নয়—যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংকের সামনে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান যদি তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করে, তাহলে চুক্তি আবার কার্যকর হতে পারে।
পরিস্থিতি যা, তাতে সিন্ধু নদীর পানির জন্য পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর পুরোমাত্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।