মানিকগঞ্জের শিবালয়ে থানায় ডেকে নিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলা ও অহেতুক হয়রানির প্রতিবাদে পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ এবং মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার বিকেলে শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া- নালী সড়কের ধুতরাবাড়ি এলাকায় ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী এ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন।এসময় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় মাতব্বর মো. আয়ুব তালুকদার,শফিকুল ইসলাম ও ভুক্তভোগী মো. রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মানববন্ধনে বক্তরা শিবালয় থানার ওসি মো. কামাল হোসেনকে প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে বলেন, বসতবাড়ি ও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে রফিকুল ইসলামের বড় ভাই সাখায়াত হোসেনের স্ত্রী সালমা আক্তার রফিকের বিরুদ্ধে শিবালয় থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। এতে পুলিশ গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রফিককে থানায় ডেকে নেন।
সেখানে ওসি মো.কামাল হোসেন রফিকুল ইসলামের কোন কথা না শুনেই তার পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এতে সে রাজি না হলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে মারধরের ভয় দেখানোসহ নানাবিধ হুমকি দিয়ে গারোদে আটকে রাখেন। ওসি তাকে ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলে রাত গভীরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন।
বক্তারা আরো বলেন, রফিকুল এলাকার ভাল ও সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। তার ভাবি ছালমা আক্তার থানায় যে অভিযোগ দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা এ মিথ্যা মামলা এবং রফিককে থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশী হয়রানী’র তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে, স্থানীয় মাতব্বর আয়ুব তালুকদার জানান, বিবাদিত জমিতে রফিকের ১শতাংশ জায়গা কেনা। এহকাল ও পরকালেও রফিক এ জায়গার মালিক। কারণ এ জায়গা রফিকের সাবকলা আলাদা কেনা।
এদিকে ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞ আদালতের দু’টি রায় আমাদের পক্ষে থাকলেও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রী সালমা আক্তার থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শিবালয় থানার এসআই নুরুল ইসলাম আমাকে ফোন দিয়ে থানায় ডেকে নেন।এসআই আমাকে ওসির সাহেবের রুমে নিয়ে গেলে ওসি আমার কোন কথা না শুনেই ধমক দিয়ে গারদে ঢুকায়।এরপর আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানসহ মানসিকভাবে নিরযাতন চালায়। রাত ১২টার পর গারদ থেকে আবার ওসির রুমে নিয়ে জোরপূর্বক মুচলেকা নেন।
এসময় ওসি মো.কামাল হোসেন ৯ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে আমাকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। বাড়ি ছেড়ে না গেলে তিনি আমার নামে ১০/১২টি মিথ্যা মামলা ও হাত-পা ভেঙ্গে জেল হাজতে ঢুকিয়ে রাখবে বলে এমন সব হুমকি দেন। রাতে বাড়িতে ফিরে মানসিকভাবে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। সকালে স্থানীয়দের পরামর্শে আমি মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করি।
এ বিষয়ে শিবালয় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.কামাল হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর জামি সংক্রান্ত বিষয়ে সালমা আক্তার একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পর দিন ৮ সেপ্টম্বর এসআই নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত রফিকুলকে থানায় আসতে বললে সে সন্ধ্যায় থানায় আসেন। রাতে অভিযোগকারীসহ স্থানীয় জামাতের দুই নেতা বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিমাংসা করবেন বলে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
উল্লেখ্য পুলিশী হয়রানির কারণে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে রফিকুল বিরপর্যস্ত অবস্থায় ছাদে বসে মাইকে শিবালয় থানার ওসি ও দারোগা থানা ডেকে নিয়ে তাকে নানা ধরনের হয়রানির ফিরিস্তি তুলে ধরে বক্তব্য দিতে থাকেন। এসময় তিনি তার মৃত্যু না হওয়া পযর্ন্ত ছাদ থেকে নীচে নামবেন না বলে ঘোষনা দিয়ে স্থানীয়দেরকে তার পাশে থাকার আহবান জানান।
ঘটনাস্থলে ছুটে আসা উৎসক জনতা ও স্থানীয়রা তার ডাকে একত্রিত হয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিলে সে ছাদ থেকে নেমে আসে।যা তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।