প্রকৃতির অপূর্ব লীলাভূমী জগদ্বিখ্যাত তুলসিমালার আঁতুড়ঘর ভূতপূর্ব দশ কাহোনিয়া সীমান্ত জেলা শেরপুর ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার প্রেসক্লাব সাটুরিয়ার দুইদিনব্যাপী আনন্দভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সদস্যদের মাঝে আরোও সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পাওয়ায়, তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সকলকে ন্যায় ও সত্যের সামিয়ানায় নিয়ে এসে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে, নিরলসভাবে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে উদ্বুদ্ধ করেছে।

গত ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৮টায় প্রেসক্লাব সাটুরিয়ার পাশে অবস্থিত ডাকবাংলো থেকে প্রবীণ সাংবাদিক মোঃ ইউনুস আলীর দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ক্লাবের সদস্যবৃন্দ। সে সময় অজানা ভুবনে ছুটে চলার এক প্রাণবন্ত আবহের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে সকলের মাঝে।
পথিমধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি রেললাইনের পাশে অত্যন্ত চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে সকালের নাস্তাগ্রহণ শেষে, প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধে মোহিত হয়ে, নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি-জাগানিয়া ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন সকল সদস্যবৃন্দ।

দু’পাশে গজারীর বনের মাঝখান দিয়ে বিশাল কালো অজগর সাপের মতো হেলেদুলে চলে যাওয়া পিচঢালা রাস্তায় দ্রুত ছুটে চলে তাদেরকে বহনকরা গাড়ীটি। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য পাবার লোভ সংবরণ করতে না পেরে, গাড়ী থেকে নেমে গজারীর বনের ভেতরে ক্ষাণিকটা সময় কাটিয়ে, সহকর্মীদের সাথে ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়ে আবারোও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন সকলেই।
সকলের মনটাও ততক্ষণে বেশ চাঙা। শত কর্মব্যবস্তার মাঝেও এ যেনো এক দুর্লভ পাওয়া। দুরন্ত গতিতে গাড়ী ছুটে চলে সামনের পানে, আর পেছনে পড়ে থাকে অজানা অচেনা গ্রাম, স্কুল-কলেজ, হাটা-বাজারসহ আরও কত কি!
সময় গড়িয়ে দুপুর। প্রেসক্লাব সাটুরিয়ার কলমসৈনিকদের নিয়ে গাড়ীটি তখন ময়মনসিংহে পৌছে গিয়েছে। ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রাবিরতি।

বিদ্রোহী কবির স্মৃতিচারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনকালে তাঁর লেখা কবিতা, গান ছিলো প্রায় সকল সদস্যেরই মুখে মুখে। চোখের সামনে যেনো জীবন্ত হয়ে দেখা দিচ্ছিলো বার বার দুখু মিয়া থেকে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত হওয়া চিরঞ্জীব নজরুল।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে মধ্যাহ্নভোজের পর, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর উদ্দেশে আবারোও ছুটে চলা। পথিমধ্যে পাঙাস মাছ চাষের ঘের দেখার জন্য শেরপুরের তেঘরি হাজীবাড়ী এলাকায় যাত্রাবিরতি করে কিছুটা সময় কাটানোর পর পুনরায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা।

গাড়ীর অভ্যন্তরে দীর্ঘসময় একত্রে কাটানোর সুযোগে, নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথন, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেয়াটা খুবই উপভোগ্য হয়ে উঠে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার প্রাক্কালে প্রকৃতি ধরা দেয় এক মোহনীয় রূপে! দু’চোখ জুড়িয়ে যায় প্রিয় মাতৃভূমির এমন সৌন্দর্য্য অবলোকন করে।
স্থানীয় একটি রেস্তোরায় স্ন্যাকস গ্রহণ করে অবশেষে সন্ধ্যর কিছুটা পরে আমরা পৌছে যাই আমাদের গন্তব্য শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীতে। পূর্ব থেকেই সংরক্ষণ করা সুসজ্জিত রুমে পৌছে ফ্রেশ হবার পর সারাদিনের ভ্রমণের ক্লান্তি কোথায় মিলিয়ে যায়, তা টেরই পাওয়া গেলোনা।
টানা দুইঘন্টা বিশ্রাম নেবার পর বাইরে বেরিয়ে স্থানীয় মুখরোচক রাতের খাবার শেষে পুনরায় রুমে এসে গল্প করা শেষে ঘুমুতে যাবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনন্দভ্রমণের আনন্দময় প্রথম দিনটি।

পরেরদিন প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগে ফ্রেশ হয়ে, ৪২ বছরের পুরনো স্থানীয় রেস্তোরায় জগদ্বিখ্যাত তুলসিমালা ধানের চালের খিঁচুড়ি খাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সকলে।
পেটপুরে অত্যন্ত সুস্বাদু খিঁচুড়ি দিয়ে নাস্তা সেরে গজনী অবকাশ কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবার তর যেনো আর সইছিলোনা কারোরই। গামারী আর গজারী বনের মাঝখান দিয়ে চলতে চলতে আমরা পৌছে যাই গজনী অবকাশ কেন্দ্রে।
অবকাশ কেন্দ্রটির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনকালে উচ্ছ্বসিত হয়ে বার বার সকলেই বলছিলো, আমার এ দেশ এতো সুন্দর! সত্যিই এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ছিলো গজনী অবকাশ কেন্দ্র।

আকাশচুম্বি পরিদর্শন টাওয়ার থেকে পার্শবর্তী প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় দেখা যাচ্ছিল আবছায়ায়। গারো মা পল্লীতে, গারো মা এবং তাঁর পিঠেশিশুসন্তান কে বহন করার প্রতীকি মূর্তিতে গারো মা সহ সকল মাকে সন্মান জানানোর বিষয়টি আপ্লুত করেছিলো সবাইকে। গজনী অবকাশ কেন্দ্র থেকেজামালপুরের লাউচাপড়া অবকাশ কেন্দ্র পরিদর্শনে যায় প্রেসক্লাব সাটুরিয়ার সদস্যরা।
অবকাশকেন্দ্রের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে জামালপুরের বকশিগঞ্জের-মেলান্দগঞ্জ সীমান্ত দেখতে যাবার পথিমধ্যে বণ্যহাঁতির পথরোধ করে দাঁড়িয়ে থাকার খবরে কিছুটা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পরলেও, অদম্য কৌতুহলবশে গাড়ী থেকে নেমে নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে বণ্য হাঁতি দেখে সবাই।
সীমান্তে পৌছে খুব কাছ থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মেলান্দগঞ্জ সীমান্ত দূর থেকে দেখে সবাই। বকশিগঞ্জে দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষে ফেরার প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু হয়।

টাঙ্গাইলের মুধুপুরে যাত্রাবিরতীতে পাহাড়ী আনারসের সুমিষ্ট রসালো স্বাদ নিতে ভুলেনা কেউ। কালিহাতীতে চা পানের বিরতি শেষে প্রেসক্লাব সাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রাত ৯টায় সাটুরিয়ায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনন্দভ্রমণ, অর্জিত হয় এক দারুণ অভিজ্ঞতা।