“সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে। আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন এবং আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’’
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুন-বাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন।
সেন্টার ফর সুফি হেরিটেজ কর্তৃক আয়োজিত ইমরান হুসাইন তুষার এবং মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে মাহফুজ আলম বলেন, “আওয়ামী লীগ ‘দরবারগুলোর’ সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে। দরবারগুলোকে এটা বোঝানোর জন্য যে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এই কোশ্চেনটা (প্রশ্ন) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়। এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি বদল হয়ে যায়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়ে যায়।”
তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, “রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক জায়গায় ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। দেশে ইসলামের যতগুলো ধারা আছে, সবক’টি ধারার মধ্যে সংলাপ এবং সংযোগের সুযোগ তৈরি না হলে রাষ্ট্র খুবই শঙ্কার মধ্য দিয়ে এগোবে।”
তিনি বলেন, “দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যে বিভিন্ন তরিকা আছে। তাদের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করা যায়, আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতারা এটা নিয়ে ভাবেননি; বরং কেউ কওমিদের সঙ্গে, কেউ সুন্নিদের সঙ্গে—এভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার করে নিয়েছেন।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ অলি আউলিয়ার দেশ। এখানে সকল ধর্মের, সকল মতের মানুষের পাশাপাশি বস-বাস। আমরা ছোটকাল থেকেই দেখে এসেছি হজরত শাহজালাল, শাহ পরাণ ও অন্যান্য আউলিয়াদের মাজারে, দরবারে মানুষ জেয়ারত করতে যান। এই সংস্কৃতি দিনদিনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আমরা চাই, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সকল ধর্মের, সকল মতের মানুষ সহিংসতাকে মোকাবেলা করে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করবেন।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “মাজারে সহিংসতা বিষয়ে কথা বলা একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে, আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতেও আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম কিন্তু এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। আমাদের দেশে মাজার, দরবারের দায়িত্বশীল যারা আছেন তাদের একটা ঘাটতি হলো তারা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারছেন না। যে কারণে তাদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না। সুফি সমাজের এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আপনারা অবদান রাখতে পারবেন।
আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন বলেন, “কুরআন এত সুন্দর, নির্মল, পবিত্র অথচ কুরআনের নাম ধারণ করে অনেকে মাজার, দরবারে হামলা চালাচ্ছেন। এটা একজন মুসলমান হিসেবে সহ্য করা খুবই কষ্টকর। এই সহিংসতার ফলে দেশের সমাজ ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই বিপর্যয় রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে, যা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়।”
লেখক ও গবেষক তাহমিদাল জামি বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কার আকিদা, মতাদর্শ কেমন তার দিকে তাকানো রাষ্ট্রের কাজ নয়। মাজার, দরবারে যদি সংস্কার প্রয়োজন হয় তাহলে তা মাজার, দরবার কর্তৃপক্ষ ভেতর থেকেই করবেন। বাহির থেকে সহিংসতা করে সংস্কার করা যাবে না বা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।”